খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ মাঘ, ১৪৩১ | ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ২৩ দিনে ডেঙ্গুতে ৯ মৃত্যু, আক্রান্ত হাজার ছুঁইছুঁই

আজ থেকে মুক্তভাবে চলাচল করতে পারব : আবদুল হামিদ

গেজেট ডেস্ক

টানা দুই মেয়াদে ১০ বছরের বেশি সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন থেকে আজ বিদায় নিচ্ছেন মো. আবদুল হামিদ। তার বিদায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এখন আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে একটু ফ্রিলি মুভ করতে পারবো। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের।’

আবদুল হামিদ আরও বলেন, আমি সারাজীবন সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি সুতরাং মানুষের বাইরে আমার কোনো চিন্তা ছিল না এবং কোনো দিন থাকবেও না। আর সকল রাজনীতিবিদদের আমি এ কথাই বলবো এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে তারা যেন রাজনীতি করে। তাহলেই রাজনীতি আরও অনেক সুন্দর হবে। আর এইটা দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে একই প্রত্যাশা।

বঙ্গভবনে সোমবার সকাল ১১টায় শপথ নেন নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। অনুষ্ঠান শেষে আজই বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে মো. আবদুল হামিদকে।

নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুর হামিদ বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতি যেন সাংবিধানিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন এটাই আমার এবং জাতির প্রত্যাশা।’

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের বিষয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই উপমহাদেশে আমিই প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সবচেয়ে বেশি দিন দায়িত্ব পালন করেছি। কেননা ১০ বছর ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরও ৪১ দিন বেশি দায়িত্ব পালন করেছি। এর আগে ভারত বা পাকিস্তানেও কেউ এত দিন দায়িত্ব পালন করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন আমি স্পিকার ছিলাম এখানে আসার আমার ইচ্ছা ছিল না, তবুও চলে এসেছি। জাতীয় সংসদে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। কারণ সেখানে নিজেকে মুক্ত বলে মনে হতো। আমি জানি যে এখানে আসলে অনেকটা বেড়াজালের মধ্যে পড়ে যাবো, যাই হোক তবুও মোটামুটি ১০ বছরের বেশি পার করে ফেলেছি।’

পরবর্তী জীবনে কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি তো এখন রিটায়ার্ড। তবে বাড়িতে বসে হয়তো কিছু লেখালিখি করব। তবে অ্যাকটিভলি রাজনীতি করার পরিকল্পনা আমার নেই। কারণ দেশের মানুষ আমাকে এত বড় ইজ্জত দিয়েছে, এই দেশে দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি করেছে। সুতরাং আবার আমি রাজনীতি করবো বা অন্য কোনো পদে যাবো এটা হবে না। এইটা করলে মনে হবে আমি দেশের মানুষকে হেয় করবো।

আজ এক বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে বঙ্গভবন থেকে আবদুল হামিদকে বিদায় জানানো হবে।

মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হস্তান্তরের পর আজই ঢাকার নিকুঞ্জ-১ এলাকায় তাঁর নিজের বাড়িতে উঠবেন আবদুল হামিদ। তিনতলা বিশিষ্ট এই বাড়িতে আসবাবসহ সব সরঞ্জাম দিয়ে বসবাসের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।

দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বিদায় নিচ্ছেন মো. আবদুল হামিদ। রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজ বাসা ‘রাষ্ট্রপতি লজে’ জিনিসপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী স্থানান্তর করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবন ত্যাগ করবেন আর সন্ধ্যায় নতুন রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে উঠবেন।

প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি সুসজ্জিত চৌকস অশ্বারোহী দল বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করবে।

বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঙ্গভবন গেট থেকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবেন। মাঝখান দিয়ে খোলা জিপে করে রাষ্ট্রপতি যাবেন। তাঁর খোলা জিপে ফুলের পাপড়ি ছুঁড়ে তাঁকে বিদায় জানানো হবে। সেখান থেকে তাঁকে শেষবারের মতো মোটর শোভাযাত্রায় নিকুঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।

এর আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন।

পরে আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

আবদুল হামিদ নবম সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। এর আগে ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার পর থেকে সাতবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!