আজ থেকে সারা দেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ। মাঠ পর্যায়ে পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এরই মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে হাটবাজার ও কারখানায় অভিযান চালানো হবে। এসব বিষয় কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এই কমিটি সরাসরি মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এদিকে, আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ থেমে নেই। গতকাল রাজধানীর কারওরান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি বিক্রেতারা পলিথিনের ব্যাগ বিক্রি করছেন। হাটবাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের বিষয়টি জানলেও বিষয়টিকে তেমন আমলে নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পলিথিন বন্ধের সিদ্ধান্ত হুট করেই চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত প্লাস্টিক সেক্টরকে ক্ষতির মুখে ফেললে এ খাতের ব্যবসায়ীদের রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।
২০০২ সালে সরকার আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করলেও মাঠ পর্যায়ে আইনটির বাস্তবায়ন করা যায়নি। অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে বিগত বছরে পলিথিনের ব্যাগ পরিবেশের বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। হুমকিতে প্রকৃতি ও প্রাণীরা। রাজধানীসহ সারা দেশে খাল, নালা-নর্দমায় পলিথিনের স্তূপের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিকূলতা। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১ অক্টোবর সুপারশপে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এর ধারাবাহিকতায় আজ থেকে সারা দেশে হাটবাজারে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধন-২০০২) অনুযায়ী, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে সরকার পলিথিন ব্যাগ বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। একই আইনে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সর্বনিম্ন শাস্তি ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড এবং পলিথিন ব্যবহারকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
বাজার মনিটরিং ও বিকল্প—দুটিকেই গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি বলেছেন, আগেও পলিথিন বন্ধের উদ্যোগ অনেকখানি সফল হয়েছিল, শুধু বাজার মনিটরিংয়ের কারণে। পলিথিনের বিকল্প নিয়েও কাজ চলছে। তবে দেশে সব সময়ই পলিথিনের সুস্পষ্ট বিকল্প ছিল। এখন পাট, কাপড় ও কাগজকে বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে।
প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় তিন হাজার কারখানায় প্লাস্টিক ও পলিথিন তৈরি হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ ব্যাগ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে রাজধানীর পুরান ঢাকায়।
খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জাতিসংঘের পরিবেশ অ্যাসেম্বলির একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০৩০ সাল পর্যন্ত পণ্যটি বন্ধে সময় নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ হলে প্লাস্টিক খাতের ৬ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাখের বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি হারাবে। এই খাতের সঙ্গে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতা জড়িত। সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা জমা হয়।
তবে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, এরই মধ্যে পলিথিনের বিকল্পে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও ২০টি প্রতিষ্ঠান বিকল্প ব্যাগের জোগান বাড়াতে কাজ করছে। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে প্রচার অভিযান চালিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। এমনকি পরিবেশবান্ধব ব্যাগ বিতরণও করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ২০১৫ সালে পাটের পলিথিন ব্যাগ উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমেদ খান। এটি বাজারজাত করতে ২০১৮ সালে পাইলট প্রকল্প নেওয়া হলেও এখনো তা বাজারে আসেনি। সবুজ ব্যাগ বাজারে আসতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এটি সরকারের নির্বাহী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার চাইলে দ্রুত বাণিজ্যিক উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে পারে। পলিথিনের বিকল্প বাজারে না দিতে পারলে আইন কার্যকর করা কঠিন। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। এখন আমরা প্রতি মিনিটে ৬০টি ব্যাগ তৈরি করতে পারি। প্রতিটি ব্যাগের দাম পড়ছে পাঁচ টাকার মতো। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করলে দাম অনেক কমে আসবে।
খুলনা গেজেট/এইচ