সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আজ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হচ্ছে। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এক দফা দাবিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ জানান, এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি আজ (৪ আগস্ট) বেলা ১১টা থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ পালিত হবে। সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে ছাত্র-জনতাকে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিতে সকলের অংশগ্রহণের আহ্বান করছি।
এদিকে আজ রোববার (৪ আগস্ট) সারা দেশের পাড়া মহল্লায় প্রতিবাদ মিছিল করবেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এছাড়া সোমবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সামনে শোক র্যালি করবে দলটি।
শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অপরদিকে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো রকম মুখোমুখি অবস্থানে জড়াতে চাই না। সেই কারণে সংঘাত হতে পারে, এ ধরনের প্রোগ্রাম আমরা এড়িয়ে চলেছি। শুক্রবার এবং শনিবার আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা অফিশিয়াল সেটা বলিনি। আমাদের যোগাযোগের একটা মাধ্যম তো আছে। যখন যোগাযোগ হবে, তখন আপনারা দেখতে পাবেন, জানতে পারবেন। এখানে কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই।’
অসহযোগের রূপ রেখা
শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্র সংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব৷’
যে স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে, তার সঙ্গে মানুষকে যোগ দেওয়া এবং পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি কাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাটিও তুলে ধরেন।
এরপর অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করেন আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। সেগুলো হলো-
১। কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা দেবেন না।
২। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।
৩। সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।
৪। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
৫। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না।
৬। সব সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।
৭। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।
৮। দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টস কর্মী ভাইবোনেরা কাজে যাবেন না।
৯। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।
১০। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববার ব্যাংক খোলা থাকবে।
১১। পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।
১২। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।
১৩। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।
১৪। আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।
১৫। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শো-রুম, বিপণী-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, জরুরি পরিবহন সেবা যেমন-ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহণ, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণ, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।
খুলনা গেজেট/এইচ