খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

‘আজরাইল’র হুমকিতে আতঙ্কে নিহত ফিরোজ ঢালীর স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ও রামপাল প্রতিনিধি

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে স্বামীর লাশ গ্রহণের অপেক্ষায় নিহত ফিরোজ ঢালীর স্ত্রী নাজমা বেগম। অনবরত দু’চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখ মুখে আতঙ্কের ছাপ। সংসারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তিনি নির্বাক। আট বছর বয়সী মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে পড়েছেন আরও বিপদে। ঘুরে ফিরে পিতাকে খুঁজছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রামপাল উপজেলার কাদিরখোলা স্কুলের সামনে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হয় রামপাল উপজেলার কাষ্টবাড়িয়া গ্রামের আরশাদ আলী শেখের ছেলে ফিরোজ ঢালী। সন্দেহের তীর উপজেলার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির দিকে। হত্যার পর থেকে পুরো এলাকা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, শুক্রবার সকালের দিকে চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন ফিরোজ। কাদিরখোলা স্কুলের সামনে থেকে চা খেয়ে বাড়ির দিকে ফিরে আসছিলেন তিনি। পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এলোপাতাড়িভাবে লাঠি দিয়ে প্রথমে আঘাত করতে থাকে। পরবর্তীতে তাকে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারাও আহত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখান থেকে বলা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে। এখানে আসার পর ফিরোজের মৃত্যু হয়।

গত কয়েক মাস যাবৎ ফিরোজকে হুমকি দিয়ে আসছিল ওই এলাকার এক প্রভাবশালী নেতাসহ তার প্রতিনিধিরা। স্ত্রীর নিকট হুমকির বিষয়টিও জানিয়েছে তিনি। তার স্বামীকে কুপিয়ে জখম করার পর এক দুর্বৃত্ত বাড়ি এসে হুমকি দেয়। নিজেকে ‘আজরাইল’ হিসেবে পরিচয় দেয় নিহতের স্ত্রীর নিকট। ‘তোর স্বামীকে যমের দুয়ারে পাঠিয়েছি। এবার বড় ছেলেকেও দিব।’ একথা তাদের মুখ থেকে শুনার পর আতঙ্কে রয়েছেন নাজমা বেগম।

নিহতের ভাইপো কামরুজ্জামান খোকন বলেন, রামপাল উপজেলা ৪ নং ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফিরোজ ঢালী। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় ফিল্মি স্টাইলে তাকে হত্যা করা হয়। ফিরোজকে যারা কুপিয়ে জখম করেছে তারা ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন বনদস্যুও রয়েছে। সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে রামপাল উপজেলার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে কয়েকদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল আর এ বিরোধের জের ধরে এ নারকীয় হামলায় তার মৃত্যু হয়েছে।

রামপাল থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দিন জানান, ফিরোজ ঢালী হত্যাকান্ডের ব্যাপারে থানায় এখনও কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। তবে হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান করা হচ্ছে বলে তিনি আরও জানান।

এদিকে রামপাল প্রতিনিধি জানান, রামপালে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী ফিরোজ ঢালীর জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শনিবার আসর বাদ কাদিরখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জনাকীর্ণ মানুষের উপস্থিতিতে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়ে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মো. আবু সাইদ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. হামীম নুরী, সাবেক চেয়ারম্যান জামিল হাসান জামু, ভোজপাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তরফদার মাহাফুজুল হক টুকু, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দীন, সাবেক চেয়ারম্যান সরদার মুজিবুর রহমান, বদরুল হুদা হিরু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সরদার বোরহান উদ্দিন, ছাত্রলীগের সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান প্রমুখ।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। দোষীদের দ্রুত আটকের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছিল।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!