সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বর্তমানে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে একটি গণমাধ্যমকে তিনি জানান, চিকিৎসার জন্য স্বপরিবারে মিলে সিঙ্গাপুর এসেছি। আগামী ২১ জুন দেশে ফিরব। এরপর সব কিছুর জবাব দেব।
আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশে যোগদানের পর সুনামগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে রেলওয়ে পুলিশ সুপার ছিলেন। বগুড়ায় প্রথম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিও, নোয়াখালীর পুলিশ প্রশিক্ষণ সেন্টার, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও হাইওয়ে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন।
সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের ৮৫ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে যান। পরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার।
২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তার নিয়োগের ৩ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। আছাদুজ্জামান মিয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৩তম কমিশনার ছিলেন।
সম্প্রতি ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ’ শিরোনামে মানবজমিনের অনুসন্ধানে তথ্য- প্রমাণ মিলেছে আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের সম্পদের পাহাড়ের।
পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি রোড। এখানে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামানের নামে। পাশের একটি প্লটের কেয়ারটেকার হালিম বলেন, এটা এক পুলিশ কর্মকর্তার জমি বলে আমরা জানি। এখানে তিনি মাঝেমধ্যে এসে ঘুরে দেখে যান। তবে তাদের নামে কোনো সাইনবোর্ড দেয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা এবং জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত মো. শামীম বলেন, পূর্বাচলের এই প্লটের প্রতি কাঠা জমির মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। পূর্বাচলের সেক্টর ৪, রোড ১০৮-এ ৫৩ নম্বর প্লটটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে ছিল। ৫ কাঠার এই প্লটটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। জমিকেনা বেচায় যুক্ত স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্লটটি শুনেছি তারা বিক্রি করে দিয়েছেন। আগে এখানে তারা আসলেও এখন আসেন না।
আফতাবনগর ৩ নম্বর সেক্টরের, এইচ ব্লকের ৮ নম্বর রোড দিয়ে প্রবেশ করলে স্থানীয় মসজিদের সামনে বাউন্ডারি দেয়া ৩৬ নম্বর প্লটে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। এই প্লটটিও আছাদুজ্জামান মিয়ার। এই প্লটটি ৮ নম্বর রোডের সবচেয়ে বড় প্লট। এখানে প্রতিটি প্লট সর্বোচ্চ ৫ কাঠা ও তার সামান্য কিছু বেশি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন জানান, আছাদুজ্জামান মিয়া পরিবারসহ মাঝে মধ্যে এসে প্লট দেখে যান। বাউন্ডারি দিলেও কোনো সাইনবোর্ড দেননি।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১ এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠার উপর ৬ তলাবিশিষ্ট আলিশান বাড়িটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে। স্কুলের কেয়ারটেকার জানান, বাড়িটি বর্তমানে ভাড়া দেয়া। যা স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নিকুঞ্জ-১ এর ৮/এ রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীনের নামে। ভবনের পাশের একজন বাসিন্দা নাম- পরিচয় গোপন রেখে বলেন, সম্প্রতি তারা বাসার নেমপ্লেট খুলে রেখেছেন। কেন রেখেছেন জানি না। বাড়িটির মূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।
সিদ্ধেশ্বরী রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় ৫৫/১-এর বহুতল ভবনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩ নম্বর ভবনে ৩ হাজার ৮শ’ থেকে ৪ হাজার স্কয়ার বর্ণফিটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে আছাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে। বাড়ির এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা বর্তমানে এই বাসায় নেই।
খুলনা গেজেট/এইচ