খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের পাহাড়, তদন্তে দুদক

গেজেট ডেস্ক

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার গাড়ি, বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট-কী নেই। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। শুধু নিজের নামেই নয়; স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং শ্যালক-শ্যালিকার নামেও গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি।

অভিযোগ রয়েছে, ডিএমপিতে ‘ঘুষ’ এবং বদলি বাণিজ্যে গড়ে তুলেছেন এসব সম্পদ। তার বিপুল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুকক)।

প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকা সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা স্কুলের পাশেই রূপায়ণ স্বপ্ন নিলয়। ৫৫/১ হোল্ডিংয়ে আলিশান এ ভবনটি ১১ তলা। এখানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বর্গফিটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে আছাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সেখানে গেলে নিরাপত্তা ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি মাস দেড়েক আগে এখানে চাকরি নিয়েছেন। এই ভবনে ১৩০টি ফ্ল্যাট। তাই সব ফ্ল্যাট মালিককে ভালোভাবে চিনেন না। বাড়ির ম্যানেজার সোহেল পারভেজ বিস্তারিত বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সোহেল পারভেজ জানান, আয়েশা সিদ্দিকার নামে এখানে একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে তিনি কখনো এখানে আসেন না। এটি ভাড়া দেওয়া আছে।

ধানমন্ডি ১২/এ নম্বর রোডের ৬৯ নম্বর বাড়িতে রয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে যাওয়া হলে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। তবে নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাড়ির একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, ধানমন্ডির ১২-এ রোডের ৬৯ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার পুরো ফ্লোরটি সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া কিনেছেন। তবে এটি তার শ্যালকের নামে।

ওই ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার ইকবাল বাহারের। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘ইকবাল বাহার হলেন আছাদুজ্জামান মিয়ার খুবই ঘনিষ্ঠ। তাই তারা দুজন একই ভবনে থাকতেন। আমিও একাধিকবার সেখানে গিয়েছি। আছাদুজ্জামান মিয়া কমিশনার থাকা অবস্থায় ওই ভবনে থাকতেন।’

শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে গিয়ে জানা যায়, সেখানে আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস সালাম ও শাহ আলম প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা এখানে নতুন এসেছি, তাই তেমন কিছু জানি না।’

ভবনের ম্যানেজার আজাদ আহমেদ জানান, ১৪ তলা এই ভবনে ৪০টি ফ্ল্যাট আছে। বেশিরভাগ ফ্ল্যাটই ২১৩৩ বর্গফুটের। ভবনের ১১ তলায় আছাদুজ্জমানের স্ত্রী আফরোজা জামানের একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে সেখানে তিনি থাকেন না। ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া আছে। অভ্যর্থনাকারী আবু বকর প্রতি মাসে ভাড়া তুলে আছাদুজ্জামানের কাছে দিয়ে আসেন। ভাড়া বকেয়া পড়লে বা কোনো সমস্যা হলে আমি নিজে স্যারের সঙ্গে (আছাদুজ্জমান) যোগাযোগ করেন বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিকুঞ্জ-১ এর ৮/এ রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীনের নামে। শুক্রবার বিকালে সেখানে যাওয়া হলে বাড়িটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। বেশ কয়েকবার কলিংবেল টিপেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে পাশের চার নম্বর বাড়ির গাড়িচালকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল এই প্রতিবেদকের। ওই গাড়িচালক জানান, আছাদুজ্জামান সপরিবারে এই বাড়িতে থাকতেন। সরকার পতনের পর তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এ ছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠার ওপর ৬ তলাবিশিষ্ট আলিশান একটি বাড়ি আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে। পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি নম্বর রোডে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। ওই জমিতে গাড়ি রাখার শেড বানিয়ে রাখা হয়েছে। পূর্বাচলের সেক্টর ৪, রোড ১০৮-এ ৫৩ নম্বর প্লটটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে ছিল। ৫ কাঠার এই প্লটটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আফতাবনগরে ৩ নম্বর সেক্টরে রয়েছে ২১ কাঠা জমি। সেখানে নিজের নামে ১০ কাঠা ও আত্মীয়স্বজনদের নামে রয়েছে বাকি ১১ কাঠা জমি।

আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে বিপুল সম্পদ রয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি রাজউক থেকে বিশেষ কোটায় একটি প্লট বরাদ্দ পান। অথচ রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই।

জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় আফরোজা জামানের নামে ৬৭ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০১৭ সালে এই জমি কেনা হয়। ওই মৌজায় তার নামে ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কেনা হয় আরও ৩৯ শতাংশ জমি। একই নামে ২০২০ সালে জোয়ার সাহারা মৌজায় কেনা হয় ১৫ কাঠা জমি। ওই বছর গাজীপুরের চাঁদখোলা মৌজায় ৩১ শতক জমি ক্রয় করেন আফরোজা। আফরোজা ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ২৮ একর জমি কেনেন। ওই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনেন তিনি। ওই বছরই রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ৬০ একর জমি তার নামে কেনা হয়। পরে তা বিক্রি করে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় দশমিক ৫৭ একর জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পান আছাদুজ্জামানের স্ত্রী। এরপর ওই জমি বিক্রিও করেন।

অনুসন্ধানে আছাদুজ্জামান মিয়ার পরিবারের সদস্যদের মালিকানার দুটি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি হলো মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড। এর চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা। আছাদুজ্জামান ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন রাজধানীর রুট পারমিট কমিটির প্রধান ছিলেন। ওই সময় মৌমিতা পরিবহণকে রুট পারমিট দেওয়া হয়। মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান হারিসুর রহমান সোহান হলেন আছাদুজ্জামানের শ্যালক। সোহানের নামে রাজধানীর নিউমার্কেটে আছে স্বর্ণের দোকান।

আরও জানা যায়, শেপিয়ার্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান আফরোজা জামান। এই কোম্পানির পরিচালক আছাদুজ্জামানের বড় ছেলে আসিফ শাহাদাত। আছাদুজ্জামানের শ্যালক নূর আলম ওরফে মিলনের নামে গাজীপুরের শ্রীপুরে দেড় একর জমি রয়েছে। ভাগনে কলমের নামেও গাজীপুরে জমি আছে দেড় একর।

এদিকে আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন গণমাধ্যমকে বলেন, আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এসেছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েকদিন আগে আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছিলেন, তার এবং পরিবারের সদস্যদের কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। যেসব সম্পদ আছে সবই আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করা আছে। সরকারের কোনো সংস্থা যদি এসব সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় তাহলে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই সংস্থাকে সহযোগিতা করবেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!