খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ মাঘ, ১৪৩১ | ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  জয়পুরহাটে ঘন কুয়াশায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত
  রাজধানীর হাতিরঝিলের ফুলনপুরায় দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত ২
ডেইলি স্টারে দেয়া সাক্ষাৎকার

আওয়ামী লীগ নামে, আওয়ামী লীগ মতাদর্শে কোনো রাজনীতি করার সুযোগ নেই : নাহিদ ইসলাম

গেজেট ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পোস্টার বয় নাহিদ ইসলাম। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, দৃঢ়তা হারাননি। আপোষ করেননি। নাহিদ ইসলাম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন বর্তমান সময়ের আলোচিত প্রসঙ্গগুলো নিয়ে। সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হল-

দ্য ডেইলি স্টার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস পার হলো। এই সময়কে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

নাহিদ ইসলাম: আমরা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছি। এক ধরণের বৈপ্লবিক পরিস্থিতি পার করছি। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে নজিরবিহীন। স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তা ছিল, অনিশ্চয়তা ছিল। সেদিক থেকে বলতে গেলে গত ছয় মাসে পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে, তবে গতিটা ধীর হচ্ছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল হয়তো আরও দ্রুত কিছু করতে পারবো। সর্বাত্মক চেষ্টার পরও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা পারিনি।

ডেইলি স্টার: এই সময়ের মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল?

নাহিদ ইসলাম: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া, জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। দেখতেই পারছেন, সরকারের কলেবর ছোট হলেও কাজের পরিধি অনেক বেশি। জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে সংস্কার কমিশনগুলো প্রতিবেদন দিচ্ছে। জুলাই গণহত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। আমি মনে করি, অগ্রগতি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি আরও বেশি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে আরও বেশি গতিতে কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

ডেইলি স্টার: এই সময়ের মধ্যে যেসব কাজ করতে চেয়েছিলেন, তার মধ্যে কী কী করতে পারেননি?

নাহিদ ইসলাম: কিছু আক্ষেপের জায়গা রয়েছে, এটা ঠিক। গত ছয় মাসে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রত্যাশিত মাত্রায় উন্নতি করতে পারিনি। তবে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, অনিশ্চয়তা থেকে স্থিতিশীলতার দিকে আসতে পারা।

ডেইলি স্টার: দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিকে কেমন পরিস্থিতি ছিল? অর্থাৎ সরকারের ভেতর থেকে কী দেখেছেন?

নাহিদ ইসলাম: প্রথম দিকে সরকার থাকবে কি থাকবে না, প্রতিবিপ্লব হবে কি না—এই ধরনের আলোচনা ছিল। দেশের ভেতরে ষড়যন্ত্র হচ্ছিল, দেশের বাইরে ভূরাজনৈতিক নানা চাপ ছিল। আমাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নিয়ে টেনশন তৈরি করা হয়েছিল। তবে, এখন এসব টেনশন মোটামুটি দূর হয়েছে। আমি মনে করি, এটা বড় ধরনের অগ্রগতি।

ডেইলি স্টার: কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম: এটা সত্যি, এখনও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কিছু এলাকায় ছিনতাই ও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। পুলিশ বর্তমানে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে কিছু সময় লাগছে। যেমন- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনেক সদস্যকে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে, আবার ঢাকার বাইরে থেকে নতুন পুলিশ ঢাকায় এসেছে। ফলে, নতুন জায়গায় অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগছে।

প্রথমদিকে, পুলিশ যখন নিষ্ক্রিয় ছিল, তখন সমালোচনা হয়েছে। আবার, যখন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, তখনও সমালোচনা হচ্ছে। এই দ্বৈত পরিস্থিতি পুলিশকে স্থিতিশীল হতে বাধাগ্রস্ত করছে। তবে, পুলিশ ধীরে ধীরে পূর্ণ কার্যক্ষমতায় ফিরে আসবে।

ডেইলি স্টার: পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা কেন? এর মাধ্যমে কি পুলিশের গুণগত কোনো পরিবর্তন সম্ভব?

নাহিদ ইসলাম: পোশাক পরিবর্তন হলেই অনেক কিছু হয়ে যাবে, এমন কিছু আমরা ভাবছি না। তবে এর মধ্যে প্রতীকী বা সাইকোলজিক্যাল বিষয় আছে। কয়েকদিন আগে কয়েকজন শহীদের কবর জিয়ারত করতে গেলাম। আমার সঙ্গে থাকা পুলিশকে দেখে এক শহীদের স্বজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। অথচ ওই পুলিশ কিন্তু তার স্বজনকে মারেনি। একই পুলিশ যদি সাধারণ পোশাকে থাকতো, তাহলে ওই স্বজন ক্ষিপ্ত হতেন না। কারণ একটি বাহিনীর প্রথম পরিচয় পোশাকের মাধ্যমে। এটাই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সবার প্রত্যাশা, পুলিশ বাহিনী মানবাধিকার রক্ষা করে চলবে। অন্যদিকে পুলিশকে দাঙ্গা দমনে কাজ করতে হয়। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশের গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

ডেইলি স্টার: তরুণরা বলছে, সংস্কারের পর নির্বাচন হওয়া উচিত। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। এই দুই বিষয়ের মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিক অবস্থান আছে?

নাহিদ ইসলাম: আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, নির্বাচন ও সংস্কারের মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিকতা নেই। বরং, গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার জরুরি।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি। নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। আন্দোলনের সময়ে বলেছি, আমার একটা নতুন বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যাতে ফ্যাসিজম ফিরে আসতে না পারে। ভবিষ্যতে কোনো সরকার যেন নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় বা ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে না পারে। এটা করা অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে, প্রাথমিকভাবে আমরা ভীতটা তৈরি করতে চাচ্ছি। রাজনৈতিক কমিটমেন্টটা নিতে চাচ্ছি, যাতে সামনের দিনে যারাই ক্ষমতায় আসবেন, তারা যেন সংস্কারের ধারাবাহিকতাটা রক্ষা করেন।

ডেইলি স্টার: প্রশ্নটা হচ্ছে সময়সীমা নিয়ে। প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে আপনারা যে সংস্কার চাচ্ছেন তা করতে পারবেন কি?

নাহিদ ইসলাম: আমরা প্রথম দফায় যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছি, এগুলো রাষ্ট্র কাঠামো ও নির্বাচন সংক্রান্ত। এরই মধ্যে কয়েকটি কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়েছে। আশা করছি ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা জানতে উদগ্রীব ছিল। সেদিক থেকে প্রধান উপদেষ্টা যে সময় দিয়েছেন তা সংস্কার উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ডেইলি স্টার: বিএনপির পক্ষ থেকে আরও আগে—ঐতিহাসিক তারিখ হিসেবে আগামী ৫ আগস্ট নির্বাচন করা যায় কি না, সেই দাবি জানানো হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম: ঐতিহাসিক দিন হিসেবে ২০২৬ সালেও তো ৫ আগস্ট আছে। যদি মাইলফলক হিসেবে গণতান্ত্রিক যাত্রার তারিখ বেছে নেওয়া যায়, তাতেও কোনো বিরোধ দেখি না।

ডেইলি স্টার: তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠন ও সরকার থেকে আপনিসহ দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আসলেই কী পদত্যাগ করছেন?

নাহিদ ইসলাম: উপদেষ্টা হিসেবে এখনো আমরা সরকারি কাজে মনোযোগী আছি। তরুণদের মধ্যে যারা দল গঠনের কাজ করছেন, তারা দলের বিষয়ে কথা বলছেন। আমাদের পদত্যাগের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ডেইলি স্টার: আন্দোলনের আইকন হিসেবে আপনাকে দলে চাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত ভাবনা কী?

নাহিদ ইসলাম: এ বিষয়ে এখনো আমি ভাবিনি। আরও ভাবতে হবে যে, কোথায় আমি ভালো পারফর্ম করতে পারবো বা কোথায় আমার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। আমার সরকারে থাকা, নাকি মাঠে থাকা ভালো হবে সেটা আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

ডেইলি স্টার: ছাত্রদের মধ্য থেকে দুইজন উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় একটা কথা আমরা জেনেছিলাম যে, যারা সরকারে থাকবেন তারা দলে থাকবেন না। এখন কি সেই অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছেন?

নাহিদ ইসলাম: সেপ্টেম্বরে ছাত্রদের পক্ষ থেকে একটি রাজনৈতিক দলের আলোচনা ছিল। কিন্তু ওই মুহূর্তে রাজনৈতিক দল করা উচিত বলে আমরা মনে করিনি। তখন রাজনৈতিক দল গঠন করলে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার শঙ্কা ছিল। সে কারণে নাগরিক সমাজের ব্যানারে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে সংগঠিত রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। সরকারের বাইরে যারা আছেন তারা সেই কাজটি করছেন।

ডেইলি স্টার: তাহলে এখন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজন কেন হচ্ছে?

নাহিদ ইসলাম: গত ছয় মাসে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন সরকারের বাইরে থাকা নেতৃত্ব দল গঠনের জন্য সঠিক সময় মনে করছে।

ডেইলি স্টার: সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এর সঙ্গে তরুণদের দলগঠনের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন?

নাহিদ ইসলাম: রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় রাখার জন্য গণঅভ্যুত্থানের পরপরই তরুণরা দল গঠন করেনি। তখন দল গঠন করলে অনেক বেশি মানুষ সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, এখনো হয়তো চান। তাই তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। সরকার অনেক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি অপসারণের কথা উঠেছিল। তখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শকে প্রাধান্য দিয়েছি। তাই বিএনপির পক্ষ থেকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠানো যৌক্তিক হয়নি।

ড. ইউনূসকে সরিয়ে অন্য কোনো ধরণের পরিকল্পনা বা অন্য কিছুর বিষয়ে তারা ভাবছে কি না জানি না। যদি ভেবে থাকেন, তাহলে সেটা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।

ডেইলি স্টার: এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের জায়গাটি আগের চেয়ে কিছুটা কমছে মনে হয়?

নাহিদ ইসলাম: বিভিন্ন দল-মতের অংশগ্রহণে আন্দোলন হয়েছিল। এখানে ভিন্নতা ছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের সময় আমরা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছিলাম। তাই ভিন্নতা থাকবেই, এটা দুর্বলতা নয়। সবাই সব বিষয়ে একই কথা বলবে, এটা আমরাও আশা করি না। কিন্তু জাতীয় চ্যালেঞ্জগুলোতে আমরা কতটা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, সেটাই বড় বিষয়।

আমার মনে হয় জাতীয় ঐক্য এখনো অটুট আছে। ঐক্য যদি অটুট না থাকতো, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সহযোগিতা না করতো তাহলে সরকার পরিচালনা আরও কঠিন হয়ে যেত। আশা করি সামনের দিনে এই সহযোগিতা অটুট থাকবে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা যদি সংস্কারের ধারাবাহিকতায় একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক যাত্রা করতে পারি, তাহলে এটাও আমাদের সবার অর্জন হবে। বিশেষ করে যারা পরবর্তী সরকার পরিচালনা করবেন, তাদের কাজ অনেক সহজ হবে।

ডেইলি স্টার: সংস্কার কতটুকু করা সম্ভব হবে, সময় তো বেশি নেই।

নাহিদ ইসলাম: এ জন্যই আমরা তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করতে আগ্রহী ছিলাম না। এত বড় গণঅভ্যুত্থান রক্তদানের মধ্য দিয়ে মানুষের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, তার নূন্যতম প্রত্যাশা পূরণ না হলে মানুষের মধ্যে অনাস্থা থাকবে, ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামবে। শেখ হাসিনার সরকার তো ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু তারা অপকর্ম করেছে। তার মানে নির্বাচিত সরকার মানেই এই নয় যে সেই সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ।

এ ছাড়া, ১৯৯০ সালে তিন জোটের রূপরেখা কথা আমরা জানি। সেই সময়ের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এবার রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে একটি গণপ্রত্যাশার পথরেখা তৈরি করতে চাই। যাতে পরবর্তী সময়ে যারাই ক্ষমতায় আসুন, সেই ধারা অব্যাহত থাকে।

ডেইলি স্টার: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা আছে। কয়েকজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন। অনেকের নামে মামলা হয়েছে, কেউ কেউ চাকরি হারিয়েছেন।

নাহিদ ইসলাম: সরকারের সমালোচনা করার কারণে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যারা আগের সরকারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল এবং সাংবাদিকতার নৈতিকতা রক্ষা করেনি, ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিল, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে। গত ১৫ বছরে সাংবাদিক বা গণমাধ্যম যেসব ভূমিকা রেখেছে, তা নিয়ে আরও আলোচনা উচিত বলে মনে করি।

সবাইকে আইনি কাঠামোয় বিচার করা সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে যারা নৈতিক অপরাধ বা সামাজিক অপরাধ করেছেন, সেটার এক ধরণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটা সরকার নিলে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। আমার মনে হয়, গণমাধ্যমের মধ্য থেকেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

ডেইলি স্টার: কারো বিরুদ্ধে হয়তো আর্থিক কারণে অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু হত্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে অন্য সাংবাদিকদের মধ্যে এক ধরণের চাপ তৈরি হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম: ঠিকভাবে মামলা না হয়ে থাকলে সেগুলো পুনর্বিবেচনার সুযোগ আমার রেখেছি। যারা আবেদন করেছেন তাদের বিষয়গুলো আমরা আইন মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছি। অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সেগুলো দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থা খতিয়ে দেখছে।

গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই। তবে সামাজিক চাপ আছে। কয়েকটি গণমাধ্যমের সামনে আন্দোলন হয়েছে। এগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে দেখানো হচ্ছে যে, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। এটা ঠিক হচ্ছে বলে আমি মনে করি না।

বিগত সময়ে সরকার পরিবর্তনের সময় গণমাধ্যম বন্ধ হওয়ার ইতিহাস আছে। কিন্তু আমাদের সরকার গঠনের পর এমন কিছু হয়নি, যদিও মানুষের মনে ক্ষোভ আছে। জুলাই আন্দোলনের সময় কিছু গণমাধ্যমে সরাসরি তখনকার সরকারের পক্ষে যেসব প্রতিবেদন-মতামত প্রকাশ বা প্রচার হয়েছে, সেগুলো কী গ্রহণযোগ্য ছিল?

কিন্তু এসব বিষয়ে তাদের (সাংবাদিকদের) কোনো বক্তব্য নেই। তারা কী বলেছেন যে, কোন প্রেক্ষাপটে ওই ধরণের আচরণ করেছেন, সেটা নিয়েও কোনো মন্তব্য করেনি। (সাংবাদিকরা) তারা আর এমন করবে না—তেমন কিছুও বলেনি। ফলে জনগণের বিভিন্ন অংশের ভেতরে থাকা ক্ষোভ হয়তো তারা প্রকাশ করছে।

বিগত ১৫ বছর গণমাধ্যমের যারা নৈতিকভাবে ঠিক কাজ করেননি বা করতে পারেননি, তারা যদি নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন, অপরাধ স্বীকার করে এবং ভবিষ্যতে এমন করবে না, এমন প্রতিশ্রুতি জনগণের সামনে করে, তাহলে হয়তো এই চাপটাও কমে যাবে।

ডেইলি স্টার: সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে এখনো সমালোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে আপনাদের চিন্তা কী?

নাহিদ ইসলাম: সাংবাদিকসহ সব মহলের মানুষের কথা বলার ও লেখার স্বাধীনতা যেন সমুন্নত থাকে তা নিশ্চিত করতে এ আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের একটু তাড়াহুড়া হয়েছে, এটা স্বীকার করি। অধ্যাদেশটি দ্রুত পাসের চিন্তা ছিল। কারণ, এই আইনের মাধ্যমে যারা মামলায় ভুক্তভোগী ছিলেন তাদেরকে যাতে দ্রুত মুক্তি দেওয়া যায়। এখন স্পিচ অফেন্স বা লেখালেখির কারণে হওয়া মামলাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ডেইলি স্টার: তার মানে অধ্যাদেশটি নিয়ে অংশীজনরা যেসব উদ্বেগ জানাচ্ছেন সেগুলো সরকার আমলে নেবে?

নাহিদ ইসলাম: অবশ্যই আরও আলোচনা হবে। সবার মতামত নিয়ে সর্বোত্তম গ্রহণযোগ্য একটি আইন করতে চাই। অংশীজনদের বৈঠকগুলো ঠিক মতো হলে সেটা সম্ভব হবে বলে আশা করি।

ডেইলি স্টার: এই সময়ে রাজনৈতিক দল গঠন করলে ‘কিংস পার্টি’র তকমা লাগবে না?

নাহিদ ইসলাম: ‘কিংস পার্টি’র আলাপটা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। যারা ‘কিংস পার্টি’র আলাপ করছে, তারাই দেশের সবচেয়ে বড় ‘কিংস পার্টি’, বিএনপি। তারা ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করেছিল। অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্ররা একক ক্ষমতাধর নয়। এখানে নানা ঘরনার লোকজন আছে। সরকার গঠনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সুপারিশ নেওয়া হয়েছে। তাই এই সরকার বহুমুখী চরিত্র ধারণ করছে। নতুন দল গঠন হলে কী এই সরকারের সব উপদেষ্টা সেখানে যোগ দেবেন? তাহলে ‘কিংস পার্টি’র কথা কেন আসবে?

ডেইলি স্টার: কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি তো সরকারে আছেন।

নাহিদ ইসলাম: আমরা আমাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। দলীয় কোনো কাজে অংশ নিচ্ছি না। তাই ‘কিংস পার্টি’ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দল গঠন হলে মাঠেই যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে, জনগণ তাদের চায় কি না।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সরকার বলছে তা পালন করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়।

নাহিদ ইসলাম: যাদের দৃশ্যমান অবস্থান নেই, তাদের আবার কর্মসূচি কিসের? তারা মূলত আতঙ্ক তৈরি করার জন্য এসব করছে। এখানে জননিরাপত্তার বিষয় আছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সংগঠন। এরা বিভিন্ন জায়গায় গুপ্ত হামলার চেষ্টা করছে, গুজব ছড়াচ্ছে। এদের অনেকে মামলার আসামি, পুলিশ গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

এখানে ভারত সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। তারা শেখ হাসিনাসহ গণহত্যায় অভিযুক্ত অনেককে আশ্রয় দিয়েছে। সেখানে থেকে এরা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ভারত সরকার সহযোগিতা না করলে এরা এগুলো করতে পারতো না। ভারত দায়িত্বশীল হলে ওই দেশে বসে অডিও ও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নানান অচেষ্টা চালাতে পারত না। এ ক্ষেত্রে ভারতের কাছ থেকে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।

ডেইলি স্টার: বর্তমান অবস্থা চললে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে বাধা কোথায়?

নাহিদ ইসলাম: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কী হবে না, বা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, এ বিষয়ে আমাদের একটা জাতীয় ঐক্যমতে আসতে হবে। আদালত, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য জায়গা থেকে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা আসে সেটা সামনে বোঝা যাবে। তবে আমরা যারা অভ্যুত্থান করেছি, তারা মনে করি, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি নেই।

ডেইলি স্টার: আপনারা তো রিকন্সিলিয়েশনের কথা বলেছেন।

নাহিদ ইসলাম: সেটা বলেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের ব্যানারে, শেখ পরিবার বা চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগের যারা দুর্নীতি বা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন, তাদের সমস্যা কী?

নাহিদ ইসলাম: আওয়ামী লীগ নামে, আওয়ামী লীগ মতাদর্শে কোনো রাজনীতি করার সুযোগ নেই। কারণ, তাদের মতাদর্শটা ফ্যাসিবাদী, যার ভিত্তিতে গত ১৫ বছরের রাজনীতি চলেছে, গণহত্যা হয়েছে। যারা ভুল বুঝতে পারবেন, তাদেরকে সেই আদর্শটাকে ত্যাগ করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের তো কোনো সমস্যা নেই। অন্য দলে যোগ দিতে পারেন, নতুন দল গঠন করতে পারেন।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ করতেন, এমন ক্লিন ইমেজের কেউ যদি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দলে যোগ দিতে চায়, আপনারা গ্রহণ করবেন?

নাহিদ ইসলাম: আমি এখন ওই প্ল্যাটফর্মে নেই। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগের রাজনীতি চান না, কিন্তু আইসিটি আইন সংশোধনের সময় দলের বিচার করার সুযোগ রাখেননি। কেন?

নাহিদ ইসলাম: তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অংশীজনদের পরামর্শ নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপদেষ্টা পরিষদের বিজ্ঞ সদস্যরা মতামত দিয়েছেন। এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, সেই দিকে বেশি নজর দিয়েছি আমরা। কারণ দল নিষিদ্ধ করতে আদালতের বাইরেও পথ আছে।

ডেইলি স্টার: সেই উদ্যোগও কী আসছে?

নাহিদ ইসলাম: আমরা আপাতত বিচার কার্যক্রমের দিকে তাকিয়ে আছি। বিচারের অগ্রগতি হলে এ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও সহজ হবে।

ডেইলি স্টার: সমালোচনা আছে, আইসিটি আইনে দলের বিচারের সুযোগ আইনে রাখা হলে ১৯৭১ সালের অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর বিচারও করতে হবে। তাই সরকার পিছিয়েছে …

নাহিদ ইসলাম: এমন কিছু না। বিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে যা করা প্রয়োজন তাই করা হয়েছে।

ডেইলি স্টার: সব ঠিক থাকলে ছয় মাস পরই নির্বাচনী আমেজের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই ছয় মাসে কী করতে চান?

নাহিদ ইসলাম: আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার আরও উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। পুলিশকে ঠিকভাবে অ্যাকটিভ না করা গেলে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে। অনেকে ভাবছে, নির্বাচন দিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বিষয়টা আসলে তা নয়। একটি ভালো নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি তৈরি হওয়া প্রয়োজন। আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাই। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন ধরা হয়। আমরা তার থেকেও ভালো একটি নির্বাচন উপহার দিতে চাই।

ডেইলি স্টার: এ ক্ষেত্রে কী ধরণের চ্যালেঞ্জ আছে?

নাহিদ ইসলাম: আওয়ামী লীগের অসংখ্য সন্ত্রাসী সরকারকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে। বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরণের স্যাবোটাজ করার চেষ্টা করছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়ে যাচ্ছেন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্বাচনের দিকে এগুতে হবে। এগুলো শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, বিদেশি বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক পরিবেশ—সবকিছুর জন্য প্রয়োজন।

ডেইলি স্টার: জুলাই আন্দোলনে ছাত্র শিবিরের অংশগ্রহণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এ সংগঠনের একটি প্রকাশনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এইসব বিষয় আন্দোলনের স্পিরিটকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে কিনা?

নাহিদ ইসলাম: অভ্যুত্থানে সব দল-মতের লোকজন ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর সবাই নিজ নিজ ব্যানারে রাজনীতি করছেন।

এর বাইরে বিশালসংখ্যক ছাত্র-জনতা আছেন, যারা কোনো দলে নেই। তাদেরকে ধারণ করার মতো কোনো রাজনৈতিক ব্যানার এই মুহূর্তে নেই। সেই সংগঠনের কাজটিই ছাত্ররা করছে। তাদের মধ্যে নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা, রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা, রাষ্ট্র পরিচালনার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। তারা তাদের নিজেদের মতো নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পনা করছেন।

ডেইলি স্টার: নির্বাচনী রাজনীতিতে এখনই জোট গঠনের নানা চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে। ছাত্রদের নেতৃত্বে দল গঠন হলে তাদের কোনদিকে যাওয়া উচিত হবে বলে মনে করেন?

নাহিদ ইসলাম: সেটা এখনি বলা কঠিন। তবে নতুন রাজনীতি করতে হলে আগে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। নিজেদের অবস্থান সংহত হলে পরবর্তী সময়ে অন্য বিষয়ে চিন্তা করা যাবে।

ডেইলি স্টার: এই মুহূর্তে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে প্রত্যাশিত অবস্থান তৈরি করা কী সম্ভব?

নাহিদ ইসলাম: এখনো তো রাজনৈতিক দল গঠন হয়নি। রাজনৈতিক দল হওয়ার পর কার্যক্রম শুরু করলে পরে সেটা বোঝা যাবে। তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

ডেইলি স্টার: সরকার এক বছর পূর্তিতে কী দেখতে চায়?

নাহিদ ইসলাম: জুলাই গণহত্যার বিচার কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি সবচেয়ে বড় অর্জন হতে পারে, যার জন্য সারাদেশের মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন কাজে যাতে কোনো ঘাটতি না থাকে তা নিশ্চিত করতে চাই। আইন-শৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য স্বস্তির জায়গায় পৌঁছাক, সেই সঙ্গে সংস্কারের জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলো নিয়ে যাতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় সেটা চাই।

জাতির সামনে একটা সমঝোতার রূপরেখা দিতে চাই, যাতে সবাই বুঝতে পারে যে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এই কাজগুলো করলাম এবং আগামীতে যারা সরকারে আসবে তারা বাকী এই কাজগুলো করবে।

ডেইলি স্টার: অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ ছাত্রনেতাদের অনেকে করেছেন। সরকার বলেছিল, তদন্ত করবে।

নাহিদ ইসলাম: সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো চিহ্নিত বা গুরুত্বপূর্ণ নেতা সেখানে ছিলেন না। সাধারণ পর্যায়ের কিছু আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন। তবে তদন্তের কাজ চলছে। গুরুত্বপূর্ণ কেউ সেখানে ছিলেন কি না বা এখনো আছেন কি না, সেটার তদন্ত হচ্ছে। খুব সম্প্রতি এসএসএফের ডিজির মালিকানাধীন ফ্ল্যাট থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরও সরকার তদন্ত করছে।

ডেইলি স্টার: আমলাতন্ত্র পরিচালনায় উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে কমিটি কেন গঠন করতে হলো?

নাহিদ ইসলাম: জুলাই অভ্যুত্থানের পর একটি ভঙ্গুর অবস্থা আমরা পেয়েছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সচিবরা পালিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে আমলাদের মধ্যে আন্দোলনের প্রবণতা ছিল। যেহেতু এখানে আলাদাভাবে কেউ দায়িত্বে নেই, তাই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

ডেইলি স্টার: নারীদের ফুটবল খেলায় বাধা, বিভিন্ন মাজারে হামলার ঘটনা ঘটছে। কারণ কী?

নাহিদ ইসলাম: এগুলো হয়তো আইন-শৃঙ্খলার ‍দুর্বলতার কারণে ঘটছে। সরকার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে মাজারের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থার কথাও চিন্তা করছে সরকার।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!