বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সব ফেডারেশনগুলোতে দিন শেষে একটা আফসোসই শোনা যায়- বাজেট ঘাটতি আমাদের! বাজেট কই? তবে এই অতৃপ্তি মোটেও শোনা যায় না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। বেশ আত্মতুষ্টি নিয়েই বিসিবি’র বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে- এটি দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া ফেডারেশন। এতই ধনী যে বিসিবি দেশের বাকি অনেক ক্রীড়া ফেডারেশনকে প্রায় অর্থকড়ি সহায়তা করে। অনেক ফেডারেশনের বাজেটের ঘাটতি মেটায়।
টিম স্পন্সর, সিরিজ স্পন্সর, টিভি স্বত্ব, মাঠে বিজ্ঞাপন। তবে সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের থেকে পাওয়া লভ্যাংশের ভাগ। সেই আয়ের ভাগ আইসিসি প্রতি বছর তাদের সব সদস্য দেশের তহবিলে পাঠিয়ে দেয়। তবে এই ভাগাভাগি সবাই সমানভাবে পায় না।
আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য দেশগুলো এই আয়ের শতকরা ৮৬ ভাগ অর্থ পায়। সহযোগী সদস্য দেশগুলোর কাছে যায় বাকি শতকরা ১৪ ভাগ। তবে পূর্ণ সব সদস্য দেশগুলোও আবার এই শতকরা ৮৬ ভাগ সমান ভাগে পায় না। যেসব দেশের কারণে আয়ের যোগান বেশি হয় তাদের ভাগের পরিমাণটা সবচেয়ে বেশি। আর এই তালিকার শীর্ষে আছে ভারত।
মূলত আইসিসি’র আয়ের প্রধান উৎসও টিভি স্বত্ব। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইসিসি তাদের টিভি স্বত্ব বিক্রি করে দিয়েছে। মূল ক্রেতা স্টার ইন্ডিয়া। এই টিভি স্বত্ব থেকে পাওয়া আয়ের অর্থই আইসিসি তাদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেয়। যার শতকরা ২২.৮ ভাগ পাচ্ছে ভারত একাই। আইসিসি’র মোট আয়ের শতকরা ৭.২ ভাগ পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যার আর্থিক মূল্য ১২৮ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই পরিমাণটা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা (১ ডলার = ৮৫ টাকা হিসাব করে)। তবে পুরো একবারে নয়, বছর প্রতি আইসিসি’র বার্ষিক আয়-ব্যয়ের পরে এই খাত থেকে টাকা পায় বিসিবি।
এই যেমন এবার এই খাত থেকে চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে ৭ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তহবিলেও এই পরিমাণ অর্থ জমা পড়বে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
আইসিসি’র এই আয়ের ভাগ অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ সমানভাবে পায়। অর্থাৎ টেস্ট খেলুড়ে এই দেশগুলো আইসিসি’র উপার্জনের শতকরা ৭.২ ভাগ করে পায়। জিম্বাবুয়ে পায় সবচেয়ে কম; ৫.৩ ভাগ। ডলারের হিসাবে যার পরিমাণ ৯৪ মিলিয়ন। আইসিসি’র আয়ের মূল যোগানদাতা ভারত পায় ২২.৮ ভাগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পায় ইংল্যান্ড ৭.৮ ভাগ।
ভারত এই আট বছরে আইসিসি’র কাছ থেকে পাবে ৪০৫ মিলিয়ন ডলার। আইসিসি অবশ্য পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে ২৯৩ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু দু’দফা মেয়াদে আইসিসি’র চেয়ারম্যান থাকা শশাঙ্ক মনোহর দেন-দরবার করে নিজের দেশের আয়ের অঙ্কটা বাড়িয়ে নেন।
খুলনা গেজেট/এএমআর