আজ ভয়াল ২৫ মে। ২০০৯ সালের এইদিনে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এতে মুহূর্তেই লন্ড ভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় জনপদ। টানা ১৫ ঘণ্টার ঘূর্ণিঝড় ও ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম। ভেসে যায় বহু কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের, প্রাণ হারায় শিশুসহ ৭৩ জন নারী-পুরুষ। মৃত্যু হয় হাজার হাজার গবাদি পশুর। উপকূলজুড়ে অর্থনীতিতে পড়ে বিরাপ প্রভাব।
এর পর পেরিয়েছে দীর্ঘ ১৬টি বছর। তবুও সেই ক্ষত শুকায়নি এখনো। আইলার কথা মনে পড়লে আজও আৎকে ওঠে উপকূলের মানুষ। এখনো অরক্ষিত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ, অনিরাপদ উপকূলীয় জনপদ। যদিও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে, তবে বাস্তবায়নে দেখা যাচ্ছে ধীরগতি। ফলে এ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্যোগের ঝুঁকি। একটি দুর্যোগের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটি দুর্যোগ এসে এলোমেলো করে দেয় উপকূলের জনজীবন।
এমতাবস্থায় নতুন করে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস উপকূলবাসীকে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতংকে রয়েছে উপকূলের মানুষ। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো রয়েছে অরক্ষিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। উপকূলের অন্তত ২৭টি পয়েন্ট অতি ঝুঁকিপূর্ণ।
এর মধ্য উল্লেখযোগ্য- বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গা বাটি, দাতিনাখালি, আটুলিয়া ইউনিয়নের বড় কুপট, খোন্তাকাটা ও সরদারবাড়ি, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাটি, ঝাপা, চাউলখোলা ও পশ্চিম পাতাখালি, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঝাপালির মমিন নগর, কৈখালী ইউনিয়নের মির্জাপুর, দক্ষিণ জয়াখালী ও জয়াখালী হুলা, মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের মৌখালী গাজী বাড়ি মসজিদসংলগ্ন, হরিনগর খাদ্যগুদাম ও সিংহড়তলী, গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া, গাগড়ামারি ও কালিবাড়ী, আশাশুনির প্রতাপনগর, কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী, আনুলিয়ার বিছট প্রভৃতি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব। কিন্তু বর্ষার আগমুহূর্তে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের। ফলে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকার ঝুঁকি কমছে না, বরং বাড়ছে।
জলবায়ুকর্মী হাফিজুর রহমান জানান, আগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হতো। কিন্তু এখন দুর্বল বেড়িবাঁধ ও বাঁধের উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে জোয়ারের পানির চাপ বাড়লেই উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাউবো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক বিষয়ে তদারকি করছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমরান সরদার বলেন, বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধ পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক স্থানে সংস্কারকাজ হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে