এমপি হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম নিজেও ঢাকা দক্ষিণ সিটির কাউন্সিলর। একদিকে এমপিপুত্র, অন্যদিকে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর জামাতা। ক্ষমতা ও বিপুল সম্পত্তির কারণেই বেপরোয়া ইরফান। রাজনৈতিক উত্থান, ক্ষমতা আর অর্থের দম্ভে মানুষকে মানুষ বলে মনে করতেন না। তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। পুরো এলাকায় নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে তুলে এনে নির্যাতন চালানো হতো ইরফানের টর্চার সেলে ! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে ব্যবহার করতেন আধুনিক যন্ত্র। এসব ব্যবহার হতো মানুষকে নির্যাতন, দখল আর ক্ষমতার দাপট দেখানোর কাজে। এক ধরনের পেশীশক্তি আর আধিপত্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন পুরান ঢাকা ও তার আশপাশ। এর ধারাবাহিকতায় অন্যের জমি ও বাড়ি দখল তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
র্যাব’র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, মদিনা আশিক টাওয়ারে ছিল টর্চার সেল। এই ভবনে অনেক অপকর্ম হতো। বেশকিছু আলামতও পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকার প্রায় ১০০ টি অবৈধ জুতা এবং বিভিন্ন পণ্যের অবৈধ কারখানা স্থাপন এবং সেগুলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতো এ প্রাইভেট বাহিনী। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে সেই কারখানা তারা পুনরায় স্থাপন করতো। অবৈধ কারখানার মালিককে আবার নতুন করে অবৈধ কারখানা স্থাপনে সুযোগ করে দিত।
সূত্র জানায়, ইরফানের বাসা থেকে যে ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে সেই ওয়াকিটকি কেন মোবাইলের যুগে ব্যবহার করা হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন প্রশ্নের উত্তরে ইরফান জানিয়েছেন যে, তিনি যখন কথা বলেন তখন তার মোবাইল ট্র্যাকিং করা হয় বলে সন্দেহ মনে করতেন। তাই তার সব কর্মকাণ্ডকে গোপন করার জন্য তিনি সেই ওয়াকিটকি ব্যবহার করতেন। আর তার বাসা থেকে যে হাড় উদ্ধার করা হয়েছে তা তিনি টর্চারের সময় ধরে আনা ব্যক্তিকে ওই হাড় দিয়ে ভয় দেখাতেন। তাকেও এই হাড়-হাড্ডিতে পরিণত করার হুমকি দিতেন।
অভিযোগ রয়েছে, শতাধিক বাড়ি ও মার্কেট দখলে নিয়েছেন এমপি হাজী সেলিম। দখল করা এসব সম্পত্তি এখন দেখাশোনা করেন ছেলে ইরফান। এগুলো রক্ষায় তার নেতৃত্বে রয়েছে প্রাইভেট বাহিনী। ক্ষমতা আর অর্থের দম্ভে মানুষকে মানুষ মনে করতেন না তিনি। নিজের স্বার্থে এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন প্রাইভেট বাহিনী। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গড়েছিলেন ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে ব্যবহার করতেন আধুনিক যন্ত্র। এসব ব্যবহার হতো মানুষকে নির্যাতন, দখল আর ক্ষমতার দাপট দেখানোর কাজে। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হলেও নিজে চলাফেরা করতেন সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো গাড়িতে।
সর্বশেষ যে গাড়িটি দিয়ে নৌবাহিনীর কর্মকর্তার মোটরবাইকে ধাক্কা দিয়েছিলেন সেই গাড়িটি ১০ বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই। নিজের কার্যালয়ে গড়ে তুলেছিলেন টর্চার সেল। সেখানে মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম। নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনার পর তাকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদ থেকে গতকাল বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তার বাসায় অভিযানে অবৈধ মাদক ও যন্ত্রপাতি পাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক বছরের সাজা দেয়া হয়। গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে ইরফানের নানা অপকর্মের তথ্য।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লালবাগ থানা এলাকায় ঢাকা সরকারি বধির হাইস্কুলের এক একর জমি দখ?ল করেছেন তিনি। ‘বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা’র প্রধান প্রকল্পের অনুকূলে সরকার ওই জ?মি স্কুলকে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত করে অনুমোদন দেয়। এই জমি হাজী সেলিম জবরদখল ক?রে? রেখেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থার সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করে বলেন, এই জায়গাটি আমরা সরকার থেকে একটি প্রতীকী মূল্য দিয়ে কিনেছি। এরপর হাজী সেলিম এই জায়গাটি দখল করে রেখেছে। আমরা ডিসিকে জমিটি উদ্ধার করে দিতে বলেছি। কিন্তু ডিসি যখন হাজী সেলিমের কথা শুনেন তখন তিনি আর ভয়ে এগোননি।
লালবাগে হাজী সেলিমের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। এই বাহিনী দিয়েই পুরো লালবাগ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লালবাগের এক বাসিন্দা বলেন, পুরান ঢাকায় হাজী সেলিমের বাইরে কেউ যেতে পারেন না। যে যান তাকে পড়তে হয় ওই এমপি’র রোষানলে। এখন তিনি কথা বলতে পারেন না। কিন্তু এই সব দেখাশোনা করে তার ছেলে কাউন্সিলর ইরফান।
হাজী সেলিমের আপন ভাগ্নে মো. হাসান পিল্লু এই প্রতিবেদককে বলেন, মামার আল্লাহ রহমতে ৫০-৬০ টি বাড়ি রয়েছে। মার্কেট তো অনেক আছে। আমার জানামতে কোনো বাড়ি মামা দখল করেননি। যদি দখল করতেন তাহলে তো ভুক্তভোগী থাকতো। সেটা তো আমরা দেখছি না।
মানুষ পেটানো ইরফানের অভ্যাস: হাজী সেলিমের তিন ছেলের মধ্যে মেজ ছেলে ইরফান সেলিম। তার বড় ভাই সোলায়মান সেলিম মদিনা গ্রুপের দেখাশোনা করেন। ছোট ভাই সালমান সেলিম অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। হাজী সেলিমের রাজনীতির অঙ্গন এখন অনেকটাই ছেলে ইরফানের দখলে। কাউন্সিলর হলেও সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে প্রায়সই ঘুরে বেড়ান ইরফান সেলিম। নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধর করে কারাগারে যাওয়া ইরফানকে নিয়ে এখন এলাকায় নানা আলোচনা। মানুষ বলছে, এ ঘটনা নতুন নয়। মতের বিরুদ্ধে, আদেশ না মানলে তিনি প্রায়ই মানুষকে মারধর করতেন। তবে ভয়ে এতোদিন কেউ মুখ খুলেনি। সম্প্রতি তার আপন ফুফাতো ভাই এবং সাবেক ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসান পিল্লুর গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২৬, দেবীদাস ঘাট লেনের একটি ভবনের সিকিউরিটি গার্ড বলেন, বড় লোকের বিরাট কারবার। তার (ইরফানের) কাছে মুরব্বি-ছোট জ্ঞান নেই। হয়তো আমার কথা তার মতের বিরুদ্ধে যাবে তখন এই ৮০ বছর বয়স্ক ব্যক্তির গায়ে হাত তুলতেও ভাববে না। এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে চার ব্যক্তিকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন কাউন্সিলর ইরফান। সন্ধ্যার পরে মদ্যপ অবস্থায় রাস্তায় বেরিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে আহত করেন। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। ইরফানকে আটকের ঘটনায় কারো ভালো হয়েছে, কারো হয়েছে মন্দ। এ ঘটনায় এলাকার মানুষ অনেকেই খুশি। খুব খুশি। গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে আমার মালিকের বাড়ির সামনে দিয়ে তাদের গাড়ি যেতে অসুবিধা হয় তাই বাসার সামনের তৃতীয় নম্বর সিঁড়ি ভাঙার কথা বলেন। এভাবে তাদের অন্যায় আবদারের শিকার হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
চার থানায় প্রাইভেট বাহিনী : পুরান ঢাকায় নিজেকে মুকুটহীন সম্রাট ভাবতেন ইরফান। তার বেপরোয়া জীবনের সঙ্গী ছিল ৪ থানায় অন্তত ৪০ জনের নিজস্ব বাহিনী। খোরপোষ দিয়ে ওই প্রাইভেট বাহিনী লালন করতেন। প্রত্যেক থানায় একজন করে ওই প্রাইভেট বাহিনীর নিয়ন্ত্রক ছিল। যাদের হাতে ছিল ওয়াকিটকি। সে ওয়াকিটকি দিয়ে পুরো পুরান ঢাকার বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন ইরফান। এই প্রাইভেট বাহিনীর অত্যাচারে গোটা এলাকার ছিল মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু, এমপি’র পুত্র বলে কথা। কেউ মুখ খুলে কথা বলতে পারতো না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার জানান, সমাজে যে যতই প্রভাবশালী হোক আইন সবার জন্য সমান। অপকর্ম করে কেউ পার পাবে না। যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়াও গতকাল র্যাব’র এক ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ‘ইরফানের মামলার তদন্তের দায়িত্বভার যদি তাদের (র্যাব) দেয়া হয় তাহলে তারা তা তদন্ত করবে। তবে ইরফানের অপকর্মের তথ্যানুসন্ধানের জন্য র্যাব’র গোয়েন্দারা কাজ করছেন। ইরফানের গ্যাং চক্রকে ধরার জন্য তারা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছেন।
চকবাজার, লালবাগ, সূত্রাপুর, ও কোতোয়ালিতে ছিল এ বাহিনীর বিচরণ ক্ষেত্র। দিন-রাত এ বাহিনীর সদস্যরা গোটা পুরান ঢাকা চষে বেড়াতো। ইরফানের দখল সাম্রাজ্য রক্ষা করা, সদর ঘাটের কুলির চক্র নিয়ন্ত্রণ করা, বেসরকরি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল বাহিনীর অন্যতম কাজ। দিন শেষ তারা সবাই জড়ো হতো ইরফানের আসর ঘর মদিনা আশিক টাওয়ারে। এ সময় তিনি প্রাইভেট বাহিনীর সদস্যদের কাছে দিনের কাজের খতিয়ানের হিসাব নিতেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কোতোয়ালি এলাকায় তার প্রাইভেট বাহিনীর প্রধান ছিল সাব্বির। তার অধীনে সুমন, আজিজ ও রহিম ছাড়াও ১০ জনের একটি দল ছিল। সূত্রাপুর এলাকায় আবিরের নেতৃত্বে ছিল প্রাইভেট বাহিনী। তার অধীনে ছিল শফিক, শহীদ ও বারীসহ ১০ জন। তারা এলাকায় বাইক পার্টি বলে পরিচিত।
এছাড়াও চকবাজারে মামুন স্টালিনের অধীনে ছিল আরেকটি প্রাইভেট বাহিনী। যার অধীনে ছিল নেওয়াজ, সাজু ও শাহ করিমসহ অন্যরা। এবং লালবাগ এলাকায় কানা দ্বীপ প্রাইভেট বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করতো। দ্বীপের অধীনে ছিল মইনুল, মিজানসহ ১০ জন। সূত্র জানায়, দিনের চেয়ে তারা রাতে ওই এলাকা চষে বেড়াতো।
আসর বসতো আশিক টাওয়ারে : রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো ফাঁকা হতে থাকে। কমতে থাকে ভিড়। কোলাহল থেমে যায়। কিন্তু চকবাজারের মদিনা আশিক টাওয়ারের আসর শুরু হতো রাত ১১টা থেকেই। একের পর এক বিলাসবহুল গাড়ি থামতো সেখানে। ব্যবসায়ী, তরুণ রাজনীতিবিদদের সরব উপস্থিতি ছিল ওই ভবনে। টাওয়ারের এই আড্ডায় অংশ নিতেন বিভিন্ন বয়সের নারীরাও। চিৎকার, বিকট শব্দে গান, আতশবাজির শব্দ শোনা যেতো রাতভর।
শোনা যেতো গুলির শব্দও। নাচে, গানে আসরে অংশগ্রহণকারীরা বুঁদ হয়ে থাকতেন মাদকে। ভোর পর্যন্ত চকবাজারের ওই এলাকা মাতিয়ে রাখতো মদিনা আশিক টাওয়ারের আসর। এই আসরের মধ্যমণি ইরফান সেলিম। সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম ও তার ঘনিষ্ঠদের খুশি করতে সব ধরনের আয়োজন করতেন তার দেহরক্ষীরা। হাজী সেলিমের ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আশিক সেলিমের নামে এই টাওয়ার। ইরফানের ‘চাঁন সওদাগর দাদাবাড়ি’র গলি থেকে বের হয়ে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়ে বহুতল মদিনা আশিক টাওয়ার।
আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আতশবাজি ও শটগানের গুলির শব্দে ঘুম হতো না অনেকের। কিন্তু আতঙ্কে প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারও। এমনকি এখনও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না কেউ। ইরফান টাওয়ারে যাবেন। সেখানে পা রাখার আগেই পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতো ইরফানের দেহরক্ষীরা। দেহরক্ষীসহ প্রায় ৪০ জন তার সেবায় নিয়োজিত ছিল। ইরফান সেলিম আসার পরপরই শুরু হতো আসর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই টাওয়ারের ১৬ তলায় হাজী সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা ডেভেলপারের অফিস। রয়েছে আরো কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস। ১৭ তলাবিশিষ্ট এই ভবনের উপরের তলায় ইরফান সেলিমের কার্যালয়। এখানেই রাতভর আড্ডা দিতো ইরফান ও তার সঙ্গীরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই কক্ষের দুই পাশে বসার জন্য রাখা হয়েছে সোফা। রয়েছে একটি টেবিল ও চেয়ার। মাঝখানে ফাঁকা জায়গা। এটি ড্যান্স ফ্লোর। রাতভর দুই পাশে বসে ইরফান ও তার সঙ্গীরা নাচ উপভোগ করতো। হিন্দি ও পপ গানের সঙ্গে নাচ চলতো মদপান। আসরের অনেকেই আসক্ত ছিলেন ইয়াবায়। রাতে এখানে রঙ্গলীলা ঘটলেও দিনের বেলা ছিল ভিন্ন। দিনে এখানে ঘটতো নির্যাতনের ঘটনা। ইরফানের কথার অবাধ্য হলেই ধরে আনা হতো লোকজনকে। কান্নাকাটি করে, মাফ চেয়েও রেহাই পেতো না তারা। চাঁদা না দিলে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। এমনকি জমি দখলে বাধা দিলেও কপালে জুটতো করুণ পরিণতি। মুখে স্কচটেপ দিয়ে, হাত-পা বেঁধে বেদম পিটানো হতো। প্রায়ই হাত ধরে টেনে-হিঁচড়ে বিভিন্ন জনকে টাওয়ারের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছেন অনেকে। ওই টাওয়ারের নিরাপত্তা ছিল কঠোর। নাইট ভিশন বাইনোকুলার, ওয়াকিটকি, ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস ব্যবহার করতো ইরফান সেলিমের নিরাপত্তাকর্মীরা। ইরফান সেলিমকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার ওই টাওয়ার থেকে কয়েক ধরনের দড়ি, হাতুড়ি, রড, হাড়, হ্যান্ডকাফ, বেশ কয়েকটি গামছা, ধারালো অস্ত্র, মোটা বেতের লাঠি, হকিস্টিক, স্যাভলন ভর্তি বোতল, গ্যাসলাইটার, ফয়েল পেপার, একটি মোটা জিআই পাইপ, দু’টি স্কিন স্কচটেপ, ট্রাইপডসহ নেটওয়ার্কিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ওয়াকিটকিসহ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস জব্দ করেছে র্যাব।