আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আরও ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। আইএমএফের চলমান ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত পূরণের অগ্রগতি মূল্যায়নে সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশ তখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যমান ঋণের আওতায় অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিয়ত নানা প্রয়োজনে যোগাযোগ আছে। আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কার চায়। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসব সংস্কারকে সমর্থন করতে আইএমএফ নিশ্চয় সহযোগিতা করবে। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আইএমএফের বার্ষিক সভায় অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের আশা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আহসান এইচ মনসুর ব্লুমবার্গকে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। এটি কাটিয়ে উঠতে ঋণের প্রয়োজন। বকেয়া ঋণ মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক থেকেও ডলার কেনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছে আরও ১ বিলিয়ন ডলার করে চাওয়া হয়েছে।
রিজার্ভ সংকট মেটাতে বাংলাদেশ দেশীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিয়মিতভাবে ডলার কিনছে। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর এরই মধ্যে অন্তত ২০ কোটি ডলার কিনেছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য, দেশীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার কেনা। রপ্তানিতে কিছুটা চাপ থাকলেও অর্থ পাচার বন্ধ বা সংকুচিত হওয়া এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট সামাল দিতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারের শর্তে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। আইএমএফের এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে বেশ কিছু শর্ত প্রতিপালন করতে হচ্ছে। ঋণচুক্তির অন্য অনেক শর্ত পরিপালন করলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর রিজার্ভ-সংক্রান্ত শর্ত পরিপালন করতে পারছে না বাংলাদেশ। তার পরও ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে প্রায় ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার বা ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার চুক্তি রয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৭ জুন তৃতীয় কিস্তিতে ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করে আইএমএফ। যদিও সম্পাদিত ঋণচুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড়ের পর পরবর্তী ছয়টি কিস্তিতে সমান ৭০ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ডলার পাওয়ার কথা ছিল। তবে রিজার্ভ সংকটের কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অঙ্ক বাড়িয়ে প্রায় ১১৫ কোটি ডলার করে ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়। আইএমএফ তা অনুমোদন করে। ফলে আগামী ডিসেম্বরে আরও প্রায় ১১৫ কোটি ডলার ছাড়ের সম্ভাবনা রয়েছে।