বিনা পারিশ্রমিকে জীবনের প্রায় অর্ধশত বছর কবর খোঁড়া কিশোরগঞ্জের ইটনার সেই মনু মিয়া (৬৭) মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দীর্ঘ চার যুগেরও বেশি সময় ধরে মানবসেবা করে গেছেন মনু মিয়া। বিনিময়ে কখনো কিছু চাননি। আশপাশের গ্রাম ও জেলাজুড়েও পরিচিত ছিলেন ‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে।
কোথাও কখনো কোনো গ্রামে মৃত্যুর খবর পেলেই নিজের লাল রঙের ঘোড়ায় পৌঁছে যেতেন তিনি। তবে চলতি বছরের মে মাসে কিছু দুষ্কৃতকারী মনু মিয়ার সেই লাল ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে। এরপরই ঘোড়ার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নির্মম সেই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। যা চোখে পড়ে অভিনেতা খায়রুল বাসারের।
মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে সেসময় হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। তাকে একটি ঘোড়া কিনে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে মনু মিয়া সেই প্রস্তাব বিনয়ের সঙ্গেই ফিরিয়ে দেন।
এরপর থেকেই মনু মিয়ার প্রতি এক ধরণের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সৃষ্টি হয় অভিনেতা খায়রুল বাসারের। শনিবার (২৮ জুন) সকালে মনু মিয়ার মৃত্যুর খবর স্বাভাবিকভাবেই শোকাহত করেছে এই অভিনেতাকে। যে কারণে আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে যোগদান করার কথা থাকলেও সেটি বাতিল করেই মনু মিয়াকে শেষ বিদায় জানাতে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই অভিনেতা নিজেই। জানা গেছে, সেই অনুষ্ঠানে নাট্য অভিনেতার পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিলো খায়রুল বাসারের। তবে তিনি সেখানে আর যাননি।
এদিকে মনু মিয়ার মৃত্যুতে তার স্বজনেরা বলেন, কবর খোঁড়ার কাজ করতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল হয়নি নিঃসন্তান মনু মিয়ার। ফলে শরীরে নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে। রোগে কাবু হয়ে সম্প্রতি শয্যাশায়ী হন তিনি। গত ১৪ মে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থতাবোধ করলে তাকে বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, মনু মিয়া শুধু একজন কবর খননকারী নন, তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক। মৃত্যুর পরও বহু মানুষের দোয়া ও শ্রদ্ধায় বেঁচে থাকবেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এএজে