সাতক্ষীরা শহরতলীর বাগানবাড়ি এলাকায় বাড়িতে অসুস্থ্য গরু জবাই করে কম দামে মাংস কিনে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৮ডিসেম্বর) ভোররাত দুইটার দিকে জবাই করার পর দুপুরে সেই মাংস চালতেতলা বাজারে বিক্রি করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার মাংস ক্রেতাসহ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মাংস বিক্রির সাথে জড়িত তিন কসাই পলাতক রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা শহরতলির চালতেতলা বাজার কমিটির সভাপতি স্থানীয় বাগানবাড়ি গ্রামের হাজী আসাদুল ইসলামের একটি জার্সি প্রজাতির গাভি গরু বেশ কয়েকদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। পশু চিকিৎস্যক দিয়ে চিকিৎসা করার পরও প্রায় সাড়ে ৮ মন ওজনের জার্সি গরুটি সুস্থ্য না হয়ে ক্রমেই আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ছিল। এরই একপর্যায় গরুর মালিক হাজী আসাদুল ইসলাম চালতেতলা বাজারের তিন কসাই যথাক্রমে গড়েরকান্দা গ্রামের শফি, বাগানবাড়ি গ্রামের মুকুল ও দোহাকুলা গ্রামের ফরহাদকে বাড়িতে ডেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে গরুটি বিক্রি করে দেন। সে অনুযায়ি শুক্রবার ভোররাত দুইটার দিকে তিন কসাই মিলে হাজী আসাদুল ইসলামের বাড়িতে ওই অসুস্থ্য গরুটি জবাই করে। পরে কাটাকাটি শেষে শুক্রবার সকালে ওই মাংস ওজন করে চালতেতলা বাজারে তাদের দোকানে নিয়ে এসে সাড়ে ৬শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেয়।
এদিকে রাত ২টার সময় বাগানবাড়ি গ্রামে হাজী আসাদুল ইসলামের বাড়িতে অসুস্থ্য গরু জবাই করে কাটাকাটির ঘটনাটি স্থানীয় এক যবুক গোপনে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে। পরে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ওই মাংস চালতেতলা বাজারে বিক্রির করার সময় ওই যুবক স্থানীয় লোকজনদের ঘটনাটি জানায়। এসময় বাজারের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে কসাই মুকুল এর দোকানে গিয়ে তার উপর চড়াও হয়। পরে মিমাংসার কথা বলে কৌশলে মুকুল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় দোকানে মাংস ফেলে পালিয়ে যায় অপর দুই কসাই শফি ও ফরহাদ।
এঘটনায় চালতেতলা বাজারের ব্যবসায়ী, মাংস ক্রেতা ও এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
অসুস্থ্য গরুর মাংস ক্রেতা পারকুখরালী গ্রামের এবাদুল হক জানান, আমার স্ত্রী ক্যান্সারের রোগি। দীর্ঘদিন ঢাকায় চিকিৎসা করার পর ডাক্তার ফেরত দিয়ে বলেছেন ‘ওনি যা খেতে চায় তাই দেন’ বেশি দিন আর বাঁচবেন না। আমি আমার অসুস্থ্য স্ত্রীকে খাওয়ানোর জন্য চালতেতলা বাজারের কসাই মুকুলের কাছ থেকে এক কেজি গরুর মাংস কিনেছিলাম। দুপুরে রান্না করে ওই মাংস খাওয়ার পর বিকালে বাজারে এসে এঘটনা জানতে পারি। সে এভাবে আমার মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রীর সাথে কেন প্রতারণা করলো এ প্রশ্ন রেখে তিনি এঘটনার বিচার দাবি করেন।
তেরশ’ টাকা দিয়ে দুই কেজি মাংস ক্রেতা বাগানবাড়ি গ্রামের আবুল কাশেম জানান, আমি মাংস বাড়িতে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়েছি। ঘটনা জানার পর ওই কসাইদের খুঁজে বেড়াচ্ছি।
একই এলাকার মন্টু জানান, সে কসাই ফরহাদের কাছ থেকে এক কেজি মাংস কিনে দুপুরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খেয়েছে। অসুস্থ্য গরুর মাংস খেয়েছে জানতে পেরে বাড়িতে বাচ্চারা আজ দুইদিন ধরে কিছুই খাচ্ছে না। তিনি প্রতারনার অভিযোগে গরুর মালিকসহ কসাইদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি।
সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার মাংস ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি হাজি আব্দুল কাদের ঘটনাটি শুনেছি জানিয়ে বলেন, চালতেতলা বাজারের কসাইরা আমাদের সমিতিভুক্ত না। তারপরও তাদের লাইন্সে যাতে বাতিল করা হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা করবো।
সাধারণ সম্পাদক ওলিয়ার রহমান জানান, ঘটনার সাথে জড়িতরা আমাদের সমিতিভুক্ত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। তারপরও বিয়য়টি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন কমিটি ও পুরাতন সাতক্ষীরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে অবহিত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর রবিউল আলম লাল্টু জানান, এঘটনা শোনার পর আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনার সাথে জড়িত তিন কসাই পলাতক রয়েছে। দ্রুত তাদের লাইসেন্স যাতে বাতিল করা হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয় চালতেতলা বাজার কমিটির সভাপতি হাজী আসাদুল ইসলাম জানান, তার সাড়ে ৮মন ওজনের গাভি গরুটি পড়ে গিয়ে পিছনের একটি পা ভেঙে যায়। পশু চিকিৎস্যককে দেখানোর পর তিনি বলেন, ‘গরুটি আর ভাল হবে না’ আপনি বিক্রি করে দেন। পরে আমি বাজারের কসাইদের কাছে ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুটি বিক্রি করে দেই। তারা শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে ৪/৫ টার দিকে গরুটি আমার বাড়িতে ফেলে জবাই করে সকালে তারা মাংস চালতেতলা বাজারে তাদের দোকানে নিয়ে যায়। আমার গরু অসুস্থ্য ছিল না দাবি করে তিনি আরো বলেন, এব্যাপারে আমার কাছে পশু চিকিৎসকের সনদপত্র রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এএজে