দীর্ঘদিন ধরে অর্ধেকের কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চলছে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল। শুধু জনবল সংকট নয়, প্রয়োজনীয় ওষুধ সংকটও রয়েছে এই হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোগীরা যাচ্ছেন খুলনা-ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে। যার ফলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তেমনি পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রধান এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৮০০ থেকে ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। ২৫০ শয্যার বিপরীতে ৩৫০ থেকে ৫০০ জন পর্যন্ত ভর্তি থাকেন নিয়মিত। বিপুল সংখ্যক এই রোগীর জন্য ৫৬টি চিকিৎসকের পদ বরাদ্দ থাকলেও ৩০টি রয়েছে শূন্য। এর মধ্যে সহকারি পরিচালক, কনসালটেন্ট চক্ষু, এ্যানেসথেশিয়া, সার্জারী, কার্ডিওলজিরমত গুরুত্বপূর্ণ পদও রয়েছে ফাঁকা। এছাড়া নার্সের ১০৯টি পদের মধ্যে ২৮টি পদ শূন্য এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনির ৭৭টি পদের মধ্যে ৪৪ টি পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া হাসপাতালে সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট, থাইরয়ডের পরীক্ষা, ইকো, সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা না থাকায় রোগীদের প্রতিদিন যেতে হয় বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
অন্যদিকে বিপুল পরিমান এই রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কাজেও রয়েছে নানান বিড়ম্বনা। হাসপাতালের শৌচাগারসহ বিভিন্ন স্থান অপরিস্কার থাকায় প্রতিনিদিনই ক্ষোভ ঝাড়েন সেবা প্রত্যাশীরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের টয়লেটগুলো এত নোংরা যে ব্যবহার করা খুবই কষ্টকর। টয়লেট ব্যবহারে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী গ্রাম থেকে আসা আবুল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে বাবাকে নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। এখনও সুস্থ হয়নি, চিকিৎসক বলছেন সব পরীক্ষা নেই, খুলনায় নিয়ে যান। তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, টাকার ব্যবস্থা করতে পারলে খুলনা নিয়ে যাব।
টিকিট কাউন্টারে সন্তান কোলে নিয়ে অপেক্ষা করা হাসিবুর রহমান বলেন, অনেকগুলো কাউন্টার রয়েছে। কিন্তু মাত্র দুটি কাউন্টারে টিকিট কাটছে। গর্ভবতী মায়েদের কাউন্টারটিও খালি রয়েছে। যদি লোকই না থাকে তাহলে কাউন্টার রেখে লাভ কি।
বুকে ব্যাথাসহ নানা অসুবিধা নিয়ে গেল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শরণখোলা উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের বিধবা শাহনুর বেগম। বেড না পেয়ে মেঝেতেই চলছে তার চিকিৎসা। সরকারি হাসপাতালে থেকেও, বাইরে থেকে ঔষধ কিনতে হচ্ছে হতদরিদ্র এই রোগীর।
হামিদা বেগম নামের এক নারী বলেন, ডাক্তার দেখাইছি। কিন্তু রক্তের পরীক্ষা করাতে হয়েছে বাইরে থেকে। বিনামূল্যে ডাক্তার দেখাতে পারলেও, পরীক্ষায় অনেক টাকা লেগেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের শিশু বিভাগে দায়িত্বরত এক সেবিকা বলেন, শিশু বিভাগে ৪০টি শয্যার বিপরীতে, বেশিরভাগ সময় শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। যার কারণে আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময়, রোগীরাও রাগ করেন।
সনাক বাগেরহাটের স্বাস্থ্য উপকমিটির আহবায়ক বাবুল সরদার বলেন, ১৫ বছরে বাগেরহাটে অনেক উন্নয়ন হলেও, স্বাস্থ্য খাতে কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। জেলার প্রধান হাসপাতালে একটা সিটিস্ক্যান মেশিন নেই, একটা ইকো মেশিন নেই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। জেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত সংকট পূরণের দাবি জানান এই নাগরিক নেতা।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, হাসপাতালের ৫৮টি প্রথম শ্রেণির পদের মধ্যে ৩২টি পদই শূন্য রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পদেও চরম জনবল সংকট রয়েছে। প্যাথলজিকাল অনেক যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পরেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। জনবলসহ অন্যান্য সংকটের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশাকরি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
খুলনা গেজেট/এএজে/এমএম