দেশের বিভিন্ন কারাগার চলছে লাগামহীন দুর্নীতি। সাবেক ও বর্তমান আইজি, ডিআইজিসহ ৫০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। দেশের বিভিন্ন কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক দুই আইজি প্রিজন্স, বর্তমান চার ডিআইজি, বিভিন্ন কারাগারের জেল সুপার, জেলারসহ অর্ধশত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংস্থাটির সবশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, দেশের বেশিরভাগ কারাগারে চলছে লাগামহীন দুর্নীতি। এসব দুর্নীতিতে কারাগারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত।
প্রতারণার মামলায় এক ভুক্তভোগী নারী সোনিয়া আক্তারের স্বামী জসিম উদ্দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সন্তান সম্ভবা স্ত্রী সোনিয়া আক্তার কারা ফটকে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন স্বামীকে দেখতে। করোনার কারণে এখন সাক্ষাতের সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট সময়ে ফোনে কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকলেও বাড়তি টাকা দেয়ার সামর্থ্য তার নেই।
কারাবন্দিদের স্বজনরা বলছেন, কারাগারে টাকা দিলে সবই সম্ভব।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কারাগারের ভেতর রয়েছে দুর্নীতির মহাচক্র। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ মিলে, টাকা খসালেই পাওয়া যায় সিট, নির্ধারিত মূল্যের বাইরে বিক্রি হচ্ছে খাবার, আর জামিন বাণিজ্যতো রয়েছেই।
কারাগারে দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক বনেছেন, সিরাজগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ইউনুস জামান। এমন অভিযোগে সম্প্রতি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও পড়েন এ কারা কর্মকর্তা। তবে জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলেননি তিনি।
শুধু ইউনুস জামান নয়, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সাবেক দুই আইজি প্রিজন্স সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম খান, বর্তমান চার ডিআইজির মধ্যে রয়েছেন বরিশাল বিভাগের টিপু সুলতান, চট্টগ্রাম বিভাগের একে এম ফজলুল হক, ময়মনসিংহ বিভাগের জাহাঙ্গীর হোসেন, খুলনা বিভাগের ছগির মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক।
এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ, গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার ২ এর সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল, একই কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আকন্দ, জেলার আবু সায়েম, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরীসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে দায়িত্বরত অর্ধশত কারা কর্মকর্তার নাম রয়েছে দুদকের অনুসন্ধানের ফাইলে।
দুদক কমিশনার ডক্টর মোজাম্মেল হক খান বলছেন, দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তারা আইনি ব্যবস্থা নিবেন। বিভিন্ন কারাগারে আমাদের নজরদারী আছে। দুদকের গোয়েন্দা সংস্থা সেখানে কাজ করছে। যেখানেই দুর্নীতির সন্ধান পাবো, সেখানেই দুদকের হস্তক্ষেপ থাকবে।
দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শকের সঙ্গে কয়েকদফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বছরের পর বছর দেশের বিভিন্ন কারাগারে দুর্নীতি চলতে থাকলেও দুদক এবং কারা কর্তৃপক্ষ হাতেগোনো কয়েকজনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে পেরেছে। অপরাধে জড়িত কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই দুর্নীতিমুক্ত হবে কারাগার।
খুলনা গেজেট/ এস আই