মুসলিম ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, ইসলাম ছাড়া সকল জাতি, দ্বীন ও ধর্ম বাতিল এবং তার অনুসারীগণ কাফির তথা ইসলামকে অস্বীকারকারী। আর দ্বীন ইসলাম হলো একমাত্র সত্য দ্বীন এবং তার অনুসারীগণ হলেন মুমিন-মুসলিম। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ
নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট মনোনীত একমাত্র দ্বীন। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫
সুতরাং আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নাযিলকৃত এসব চিরন্তন সত্যবাণীর মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তি জানে যে, ইসলামপূর্ব সকল ধর্ম ইসলামের আগমনে ‘মানসুখ’ বা রহিত হয়ে গেছে ; আর ইসলাম হল গোটা মানবজাতির একমাত্র দ্বীন বা জীবনবিধান ; সুতরাং আল্লাহ তা’আলা কারও পক্ষ থেকে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীনকে গ্রহণ করবেন না এবং ইসলাম ছাড়া আর অন্য কোনো শরী’য়তকে শরী’য়ত হিসেবে পছন্দ করবেন না ; আর সেখান থেকেই মুসলিম ব্যক্তি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই কাফির, যে ব্যক্তি ইসলামকে আল্লাহ তা’আলার জন্য দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। আর সে ‘কুফর’ বা কাফিরের সাথে নিম্নোক্ত আদবসমূহ রক্ষা করে চলবে :
১. কুফরীকে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং তাকে পছন্দ না করা ; কারণ, ‘কুফর’কে পছন্দ করাও কুফরের অন্তর্ভুক্ত।
২. আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক ঘৃণার কারণে তাকে অর্থাৎ কুফরির প্রতি ঘৃণা রাখা ; কেননা, ভালোবাসা হবে আল্লাহর জন্য এবং ঘৃণা করাটাও হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ; আর আল্লাহ তা’আলাকে অস্বীকার করার কারণেই তিনি তাকে ঘৃণা করেন ; সুতরাং মুসলিম ব্যক্তি কাফিরকে ঘৃণা করবে আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক তাকে ঘৃণা করার কারণেই।
৩. তার সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন না করা ; কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে।” -সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ২৮
৪. তার সাথে ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার ও ন্যায় আচরণ করা এবং সে যদি বিদ্রোহী না হয়, তাহলে তাকে কল্যাণকর সুযোগ সুবিধা প্রদান করা ; কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেন, “দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।” -সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত : ৮
সুতরাং এ সুস্পষ্ট আয়াতটি কাফিরদের সাথে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচার-ব্যবহার এবং তাদের উপকার করার বিষয়ে বৈধতা দিয়েছে ; আর শুধু বিদ্রোহী কাফিরগণ ব্যতীত বাকি সকল কাফিরই এ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
৫. তার প্রতি সাধারণ সহানুভূতির সাথে করুণা করা, যেমন-সে ক্ষুধার্ত হলে তাকে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা, তৃষ্ণার্ত হলে তাকে পানি পান করানো, অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিপদ-মুসিবত ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা এবং কষ্টকর বিষয় থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা ; রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ
তুমি পৃথিবীতে যারা আছে, তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমার প্রতি দয়া করবেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস-১৯২৪
৬. যদি সে বিদ্রোহী না হয়ে থাকে, তাহলে তার সম্পদ, জীবন বা সম্মানের ব্যাপারে তাকে কষ্ট না দেওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: যে ব্যক্তি কোনো যিম্মীকে (অমুসলিম নাগরিককে) কষ্ট দিবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে দাঁড়াবো।
৭. তাঁদের সাথে বিবাহ বন্ধনে অবদ্ধ না হওয়া, কেননা, আল্লাহ তা’আলা মুমিন রমনীকে কাফিরের সাথে বিবাহ দেয়ার ব্যাপারে সাধারণভাবে নিষেধ করে বলেন, “মুমিন নারীগণ কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিরগণ মুমিন নারীদের জন্য বৈধ নয়। -সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৫।
যদিও কিতাবী রমনীদেরকে বিয়ে করা বৈধ ; কিন্তু বর্তমানে প্রকৃত কিতাবী পৃথিবীতে বিদ্যমান নেই।
৮. তাকে আগে সালাম না দেওয়া এবং সে যদি সালাম দেয়, তাহলে وَعَلَيْكُمْ (তোমাদের উপরও) বলে তার জবাব দেওয়া ; কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন : যখন ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা তোমাদেরকে সালাম প্রদান করে, তখন তোমরা বল: وَعَلَيْكُمْ (তোমাদের উপরও)। -বুখারী, হাদিস নং- ৬৫২৭
৯. তার বিপরীত কাজ করা এবং তাকে অনুকরণ ও অনুসরণ না করা, যেমন- দাড়ি লম্বা করা, যখন সে তা মুণ্ডন করে ফেলে ; দাড়িতে খিযাব বা মেহেদী ব্যবহার করা, যখন সে তা রঙ করে না; অনুরূপভাবে পোশাক পরিধানের ব্যাপারেও তার বিপরীত করা। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে, তোমরা গোঁফ ছোট করবে এবং দাড়ি লম্বা রাখবে। -বুখারী, হাদিস নং- ৫৫৫৩
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন ও সেই অনুযায়ী আমল করে দুনিয়া-আখেরাতের সফলতা অর্জনের তাওফিক দান করুন।
(লেখক : ইমাম ও খতিব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)
খুলনা গেজেট/ টি আই