যশোরের অভয়নগর উপজেলার শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দরনগর নওয়াপাড়া এলাকায় রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যার প্রাথমিক কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। চলছে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) এই প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
সূত্র জানিয়েছে, যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় ইপিজেড তৈরিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ১ হাজার ৫৪২ কোটি ৭২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। আর ইপিজেড কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ৩৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ৩০ জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যশোর ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাড়ে চার লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া ‘যশোর রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৫৬৫ দশমিক ৮৭১ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন করে ৪৩৮টি শিল্প প্লট সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্প এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করা হবে। খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও ৬ তলা কারখানা ভবন, ৩টি ১০ তলা ও ৪টি ৬ তলা বিভিন্ন ধরনের আবাসিক ভবন, ১টি ৬ তলা ও ২টি ৪ তলা অফিস ভবন এবং ২টি অন্যান্য ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৪টি ১১/০.৪১৫ কেভি সাবস্টেশন, ১৪ দশমিক ৮৭৪ কিলোমিটার ১১ কেভি এইচটি লাইন ও ১টি ৩৩/১১ কেভি জিআইএস সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। ১৪ দশমিক ৬৭৯ কিলোমিটার পানির লাইন স্থান করা হবে। প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তরে একটি হেলিপ্যাড এবং স্যানিটারি ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক সুবিধা, সংযোগ রাস্তা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ জলাধার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা সৃষ্টি করা হবে।প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিল্পের বিকাশ, বিনিয়োগ আহরণ, রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ‘যশোর রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা’ শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পণ্যের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, শ্রমঘন শিল্পকে অগ্রাধিকার প্রদান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদনে বেসরকারি খাতের প্রসার, উৎপাদন বহুমুখীকরণ এবং শিল্প উৎপাদনে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা-৯ এ ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়ন এবং জাতীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মসংস্থান ও জিডিপিতে শিল্পখাতের অংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এই খাতের অবদান দ্বিগুণ করা হবে’ বলে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া লক্ষ্যমাত্রা ৮-এ শোভন কাজ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। তাই প্রকল্পটি সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ৮ ও ৯ এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
স্থানীয় শ্রমিক রহিম হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, সরোয়ার হোসেন বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের এলাকাসহ আশপাশের অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নাজমুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আছাদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ আহরণ এবং রফতানি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ ছাড়াও ওই অঞ্চলের চার লাখেরও বেশি মানুষের কর্মস্থান নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নও সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর বলেন, এ অঞ্চলে খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। তাই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেকারাত্বের সংখ্যা কমবে। যার প্রাথমিক কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। চলছে জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া। ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাড়ে চার লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম