যশোরের অভয়নগর উপজেলায় গভীর রাতে প্লাস্টিকের ব্যাগভর্তি ৫টি তাজা ককটেল বোমাসহ ভূয়া র্যাবকে ধরে আসল র্যাবের হাতে সোপর্দ করেছে গ্রামবাসী। রবিবার গভীর রাত একটার দিকে উপজেলার বাগদাহ গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে সাথে থাকা অপর দুই যুবক পালিয়ে গেছে। গ্রামবাসীর হাতে আটক রকিবুল ইসলাম ওরফে নয়ন যশোর সদর উপজেলার জয়ান্তা গ্রামের মৃত- তৈয়েব আলীর ছেলে। আটক যুবককে বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়ে অভয়নগর থানায় সোপর্দ করেছে র্যাব।
গ্রামবাসীর দাবি, ভূয়া র্যাব সেজে বোমা দিয়ে ওই এলাকার আলামিন নামের এক যুবককে ফাঁসাতে গিয়ে আসল র্যাবের হাতে ধরা খেয়েছে রকিবুল নামের ওই যুবক। মোটর সাইকেল যোগে তিন যুবক রাত ১২টার দিকে বাগদাহ গ্রামে প্রবেশ করে। এসময় তারা বাগদাহ স্কুল সংলগ্ন মারুফের চায়ের দোকানে চা পান করে বাগদাহ পশ্চিমপাড়া কোনদিকে জানতে চায়। চা পান শেষে তারা বাগদাহ পশ্চিমপাড়ার দিকে যায়। বেশ কিছু সময় ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করে আতিয়ার রহমান বিশ্বাস নামে জনৈক ব্যক্তির বাড়ির অনতিদূরে সংলগ্ন পুকুরের পাশে দাঁড়ায়। এ সময় এক যুবক হেটে বেশ কিছুদির গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অপর দুইজন সেখানে দাঁড়িয়ে ফিসফাস করছিলো। এ সময় আতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে আল মামুন বিশ্বাস বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় হাওয়া খেতে এসে ওই দুই যুবকের আচরণ দেখে সন্দেহ হয়। কাছে যেতেই আলা মামুনকে ধরে গালি দিয়ে নিজেদেরকে র্যাব বলে পরিচয় দেয়। এসময় আল মামুন ঘুরে ব্যাগ হাতে থাকা যুবককে জাপটে ধরে র্যাবের পরিচয় পত্র দেখতে চায় এবং চিৎকার দিয়ে গ্রামবাসীকে জড়ো করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুই যুবক মোটর সাইকেলসহ পালিয়ে যায় এবং রকিবুল নামের ওই যুবককে আল মামুন জাপটে ধরে রাখে। গ্রামবাসী এসে যুবকের হাতে থাকা ব্যাগ তল্লাসী করে ৫টি তাজা ককটেল বোমা দেখতে পায়। আতঙ্কিত গ্রামবাসী তাৎক্ষনাত স্থানীয় ইউপি মেম্বর মোঃ ফারুক হোসেনের সহায়তায় অভয়নগর থানা পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু থানা পুলিশ পৌছানোর আগেই ঘটনার ৫/৭ মিনিটের মধ্যে সেখানে র্যাব-৬, যশোর এর একটি গাড়ী পৌছে যায়। এ সময় গ্রামবাসী আটক যুবককে উদ্ধারকৃত বোমাসহ র্যাবের হাতে তুলে দেয়। তারপরই সেখানে উপস্থিত হয় অভয়নগর থানা ও গাজীপুর পুলিশ ক্যাম্পের দুইটি টিম।
এ ব্যাপারে আল মামুন বিশ্বাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাকে ও আমার পিতাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করে একটি কুচক্রিমহল। এমন গোপন খবরে আমরা গত দুইরাত বাড়িতে সতর্ক অবস্থানে থাকি। রোববার গভীর রাতে ওই যুবকদের কানাঘুষা দেখে সন্দেহ হলে আমি লাইট নিয়ে এগিয়ে যেতেই একজন এসে আমাকে ধরে বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে নিজেদের র্যাব পরিচয় দেয়। আমি এসময় একজনকে জাপটে ধরে চিৎকার দিতে থাকি এবং তাদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাই। তাৎক্ষনাৎ আমার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশিরা ছুটে আসলে দুইজন পালিয়ে যায়। । ঘটনার ৫/৭ মিনিটের মধ্যে র্যাবের একটি গাড়ি সেখানে আসলে গ্রামবাসী ওই যুবককে বোমাসহ র্যাবের হাতে তুলে দেয়। আমিসহ আমাদের পরিবার ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরি করবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন শেখ বলেন, গ্রামের আতিয়ার রহমান বিশ্বাসের বাড়িতে বোমা রেখে ফাঁসাতে গিয়ে রকিবুল নামে এক যুবক গ্রামবাসীর হাতে ধরা খেয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনাত ঘটনাস্থলে পৌছে অভয়নগর থানা ও গাজীপুর ক্যাম্প পুলিশকে জানায়। কিন্তু পুলিশ পৌছানোর আগেই আতিয়ার রহমান বিশ্বাসের বাড়ির সামনে র্যাবের গাড়ি এসে পৌছে।
মেম্বর ফারুক শেখ র্যাবের বরাত দিয়ে জানান, র্যাবের এক কর্মকর্তা তিনিসহ গ্রামবাসীদের সামনে জানিয়েছেন আতিয়ার রহমান বিশ্বাসের বাড়িতে বোমা আছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা সেখানে অভিযানে আসে। পরবর্তীতে সেখানে অভয়নগর থানা ও গাজীপুর ক্যাম্প পুলিশ উপস্থিত হয়। গ্রামবাসী বোমা রেখে ফাঁসাতে আসা ওই ভূযা র্যাবকে আসল র্যাবের হাতে তুলে দেয়। র্যাব-৬, সিপিসি-৩ যশোরের লেঃ কমান্ডার এম নাজিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বোমাসহ রকিবুল নামের এক যুবককে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বোমা দিয়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে এবং পাঁচটি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করে রকিবুলকে বোমাসহ অভয়নগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ এ কে এম শামীম আহসান বলেন, ঘটনাস্থলে আমি নিজেই গিয়েছিলাম। আমাদের আগে সেখানে র্যাবের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টিম পৌছে। এ কারনে বোমাসহ রকিবুলকে গ্রামবাসী র্যাবের হাতে হস্তান্তর করে। এক প্রশ্নে ওসি বলেন, পাপীর সাজা আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে যায়। তবে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বলতে পারবো।