অভয়নগরে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন। দুই দিনের বৃষ্টিতে চরম বিপাকে এ উপজেলা কৃষকেরা। সারাদিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফসলের মাঠে পানি জমে গেছে। তলিয়ে গেছে জমিতে থাকা কাটা ধানের আটি। কৃষকের চরম ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সকাল থেকে সারাদিন চাষীরা তাদের জমিতে থাকা ধান গুলো বাড়ি আনার জন্য নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে পরিবারে সবাই। এক দিকে যেমন শ্রমিক সংকট অন্য দিকে দুই একজনকে পেলে ও বেশি মুজুরিতে কাজে নিতে হচ্ছে। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। এ অবস্থায় ফলন কম হওয়ার পাশাপশি উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা, সে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের কপালে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১২ হাজার ২শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রেমবাগ ইউনিয়নে ১১ শত ৪ হেক্টর, সুন্দলী ৬ শত ২৫ হেক্টর, চলিশিয়া ১ হাজার ২৫হেক্টর, পায়রা ৯ শত ৯৫ হেক্টর, শ্রীধরপুর ১৯ শত ৪১ হেক্টর, বাঘুটিয়া ১৩ শত হেক্টর, সিদ্দিপাশা ১৯ শত ৭০ হেক্টর, শুভরাঢ়া ইউনিয়নে ১৮শ ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। কৃষকের ঘরে পৌঁছেছে ৫০ ভাগ জমির ধান। বাকি ২৫ ভাগ কাটা ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
৪৫ বছর বয়সী কৃষক মাজেদ হোসেন ১৮ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। শ্রমিক না পেয়ে সব ধান সময় মত ঘরে তুলতে পারেননি তিনি।
রাজাপুর গ্রামের মিন্টু মন্ডল বলেন, ‘জোনের অভাবে এক বিঘে জমির ধান কাটতি পারিনি। দুই বিঘের ধান কাটিছি। বাড়ি আনতি পারিনি। মাঠে ধান ভাসছে।’
আমডাঙ্গা গ্রামের আকবর আলী ছয় বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাঠের ধান এখনও পুরো কাটা হয়নি। যা কাটা হইছে, মাঠেই পড়ে আছে। বৃষ্টি একদম শ্যাষ করে দিল। কি করব এখন বুঝতি পারছিনে।’
একই গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘বৃষ্টিতে ধান তো গেলোই, সঙ্গে বিচেলিগুলোও নষ্ট হয়ে গেল। ধান বিক্রির পাশাপাশি বিচেলিগুলো বিক্রি করতি পারলি লাভ একটু বেশি হয়। এখন বিচেলিগুলো পঁচে যাচ্ছে।’
উপজেলার কৃষকেরা শেষ সময়ে বোরো আবাদ ঘরে তুলে আনার আগেই হঠাৎ ঝড়বৃষ্টিতে তা আবার ক্ষতিতে পরিণত হয়েছে। যে কারণে উপজেলা ধোপাদী, সরখোলা, চেঙ্গুটিয়া, একতারপুর , শংকরপাশা, দেয়াপাড়া, শ্রীধরপুর সহ কয়েক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষীরা তাদের জমি থেকে ধান তুলে রাস্তার ওপরে রেখেছে শুকানোর জন্য। অনেক কৃষক তলানো ধান তুলে এনে আইলের পরে রেখেছে। আবার কিছু কিছু জমি ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
কথা হয় কৃষক মিজানুর হোসেনের সাথে তিনি বলেন, ‘আমি এবার বোরোর আবাদ একটু দেরিতে চাষ করেছিলাম, যে কারণে ঘরে ধান তুলতে দেরি হচ্ছে। কিছু ধান ঘরে তুলেছি। বাকি গুলো তোলার সময়ে ঝড় বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।’
সুন্দলীর আশুতোষ মন্ডল, হরেন ধর, চেঙ্গুটিয়ার চাষী মনির হোসেন বলেন, বীজতলা পর থেকে অনেক ব্যয়ে বোরো আবাদ করেছিলাম। ভাল ফসল হয়েছিল । কিন্তু ঘরে তোলার আগে ঝড় ও ভারী বর্ষণে আমাদের ধান তলিয়ে গিয়েছে। ধান ঘরে তুলতে অনেক টাকা ব্যয় হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদানী বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১২ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের চাষ হয়। এর মধ্যে ৭৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। কৃষকের ঘরে পৌঁছেছে ৫০ ভাগ জমির ধান। বাকি ২৫ ভাগ কাটা ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা মাইকিং করে কৃষকদেরকে সর্তক করেছি ধান গুলো ঘরে তুলে আনার জন্য।
খুলনা গেজেট/ এস আই