যশোরের অভয়নগরে পান চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন অনেক কৃষক। তাই দিন দিন বাড়ছে পানের বরজের সংখ্যাও। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে পানের ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া, চাষিরা বাজারেও পানের দাম পাচ্ছেন ভালো।
উপজেলার একমাত্র সবচে বেশি পান চাষ হয় অভয়নগর ও চেঙ্গুটিয়া এলাকায়। এ উপজেলার প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের পানের বরজ আছে।ওই সব
এলাকার মধ্যে আবার পান চাষের জন্যে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম। এ গ্রামে অধিকাংশ কৃষকদের প্রধান আয়ের উৎসই হচ্ছে পান। এখানে প্রায় গ্রামজুড়েই রয়েছে পানের বরজ। যাদের জমি নেই, তারাও অন্যের জমি বন্ধক নিয়ে পান চাষ করছেন। আর এ থেকেই তারা মেটাচ্ছেন পরিবারের যাবতীয় ব্যয় ভার। নওয়াপাড়া ও চেঙ্গুটিয়া রয়েছে পান বেচা কেনার হাট। তাই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত পান স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়েও বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। দেশের সব স্থানেই এখানকার পানের চাহিদা রয়েছে। অনেকে আবার পান ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাই কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা ঝুঁকছেন পান চাষে। পান ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই প্রিয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াতিদের খাবারের পর একটু পান-সুপারি না দিলে, মনে হয় যে, কি যেন একটা তাদের অপূর্ণতা রয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ এলাকায় ৪০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। পান উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩০ মে. টন।
চেঙ্গুটিয়া গ্রামের পান চাষি মোঃ রফিকুল ইসলাম, আব্দুল গনি, আবুল খায়ের, সাইফুদ্দিন, শওকত হোসেন, আনসার হোসেন, কিতাব আলী, আমিন উদ্দিন, ইসলাম মোড়লের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পান সাধারণ ভাদ্র-আশ্বিন মাসে দো-আঁশ মাটিতে চাষ করতে হয়। ভালো ভাবে আগাছা পরিষ্কার করে চাষ দিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ কেজি ফসফেট, ১ কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম লিজেন্ট মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হয়। পরে দেড় ফুট
দূরত্বে সারি বেঁধে মাটি উঁচু করে ১ ফুট দূরত্বে পানের গাছ লাগিয়ে দিতে হয়। প্রতিটি পানের লতা থেকে ১২ থেকে ১৫টি চারা লাগানো যায়। এরপর বাঁশের শলা, পাটকাঠি, জিআই তার, কাশবন, সুপারি পাতা ও সুতা দিয়ে পানের বরজ বানাতে হয়। জমির চারদিকে বেড়া দিতে উপরে জিআই তার ও কাশবন দিয়ে বানানো হয় চালা। এতে প্রতি বিঘা জমির পানের বরজে খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। মাটি থেকে পানের লতা যখন ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হয়, তখন পাশে একটি ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা বাঁশ বা পাটকাঠি পুঁতে দেওয়া হয়। এরপর পানের লতাটি ধীরে ধীরে বড় হয় এবং কাঠি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ৫ থেকে ৬ মাস পর থেকে পান বিক্রির উপযোগী হয় এবং এরপর প্রতি ৮ থেকে ১০ দিন পরপর পান বিক্রির জন্যে বাজারে নেওয়া যায়। একটি পানের বরজ থেকে সর্বনিম্ন ১৫ বছর একাধারে পান পাওয়া যায়।
বাঘুটিয়া এলাকার পান চাষি আমিনুর রহমান, হাবিবুর রহমান, শেখ জালাল, মোশারেফ হোসেন, বাবুল উদ্দিন জানান, পানের বরজে এক প্রকার
ফাপপচা রোগ দেখা দেয়। এ থেকে বাঁচাতে পারলে একটি বরজ ২০ থেকে ২৫ বছর থাকে। সাধারণ আষাঢ়-শ্রাবন মাসে এ রোগটি বেশি দেখা
যায়। এটি পানে সবচেয়ে বড় রোগ। তবে এ রোগ দমেন ফোরি, এডমা ও কাফডার-এ নামে তিনটি ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কিন্তু শীতের
সময় এক প্রকার বিষাক্ত কুয়াশা পান গাছে লাগলে পান পাতা ঝরে যায়। এতে চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এটা প্রতিরোধে কোনো ওষুধ না থাকায় মাঝেমধ্যে বিপাকে পড়তে হয় চাষিদের। অনেক চাষি কুয়াাশা ঠেকানোর জন্য বরজের চারপাশ পলিথিন দিয়ে ঢেকেও দেয়।
রফিকুল রহমান নামের এক পান চাষি বলেন, আমার দুই বিঘার উপর একটা পানের বরজ আছে, তার বয়স প্রায় ১০ বছর হবে। পান চাষ করেই আমার সংসার চলে। এই পর্যন্ত পানের ভালো ফলন পেয়েছি, দামও ভালো পেয়েছি। পান চাষ করে আমি স্বাবলম্বী। বর্তমানে প্রতি বিড়া পান আকার ভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করতে পারছি। বাজারে পানের চাহিদা থাকায় পুরাতন পানের যে দাম পেয়ে ছিলাম, এখন নতুন পানেরও দাম তেমনি পাচ্ছি। হাটে পান বিক্রি করে ভালো আয় করতে পারছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদামী বলেন, উপজেলায় এবছর ৪০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি উৎপানের
লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ মেট্রিক টন। জাইকার আয়োজনে উপজেলাতে পান চাষিদের কয়েকটি প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। যে কারণে এ এলাকায়
পান চাষ ভালো হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এখানে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই