অভয়নগরবাসীর কয়েক যুগের স্বপ্নের ভৈরবসেতু উদ্বোধনের আগেই হুমকির মুখে পড়েছে। সেতুর পিলারের গাঁ ঘেষে রাত-দিন ২৪ ঘন্টা ধরে চলছে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ। উদ্বোধনের আগেই সেতুটিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
যদিও মাটি কাটা বন্ধের জন্য একাধিকবার ওই ব্যবসায়ীকে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করে মাটি কেটে ব্রিজের গোড়ায় পুকুর বানিয়ে ফেলেছেন।অবশেষে এ মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ওই ব্যবসায়ীকে লিখিত চিঠি প্রেরণ করেছে। তথাপি এলজিইডির এ নির্দেশ অমান্য করে মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে ব্রিজটিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে নওয়াপাড়ার জনৈক প্রভাবশালী।
দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার সাথে পূর্বাঞ্চলের নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ রাজধানীর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের স্বার্থে লাখ লাখ মানুষের প্রাণের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অগ্রাধিকারে নওয়াপাড়ার এ মোকামের বুকচিরে ভৈরব সেতু নির্মাণের জন্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
জানা গেছে, করোনার এ মহা দুর্যোগের কারণে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বিলম্বিত হচ্ছে। এদিকে ভৈরব সেতুর পশ্চিম তীরে নওয়াপাড়া পৌরসভা অংশে প্রায় তিনটি পিলারের গা ঘেষে থাকা মাটি ৮/১০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকো প্রভাবশালী জনৈক ব্যবসায়ী।
সরেজমিন ব্রিজ এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, রাত-দিন দ্রুত স্কেভেটর মেশিনের মাধ্যমে মাটি কেটে ব্রিজকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এলজিইডি’র অভয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ব্রিজের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যেই ব্রিজের প্বার্শ বরাবর ৮ থেকে ১০ ফুট গর্ত করে মাটি উত্তোলন করে ব্রিজ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বারবার মৌখিকভাবে বলা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তি অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের কাজ করেছেন। এবং অধিগ্রহণকৃত জমি দখল করে অবৈধভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছেন। বিষয়টি ওই ব্যবসায়ী গুরুত্ব না দেয়ায় তার খামখেয়ালীপনার কারণে ভৈরব সেতুটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ও উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দায়িত্বে নিয়োজিত দফতরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বলা হয়েছে।
এছাড়াও গত ৫ আগস্ট স্মারক নংঃ ৪৬.০২.৪১০৪.০০০.০০.০০২.২০২০-৪৭৫ মারফত এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদপূর্বক খননকৃত জায়গা ভরাটের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’ দ্রুত উক্ত ব্যক্তি যদি মাটি পুণঃভরাট করে ব্রিজটিকে হুমকির মুখ থেকে রক্ষার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বিআইডব্লিউটিএ এর নির্দেশ উপেক্ষা করে ভৈরব নদীর প্রায় দুই একর চর দখল করে জোর পূর্বক ঘাট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। ওই চর দখলের কারণে ভৈরব নদীর বাঁক পরিবর্তন হয়ে নদীর উত্তর পাড়ের বেশ কয়েকজন জমির মালিকের কয়েক একর সম্পত্তি ভৈরব নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে ওই ব্যবসায়ী তার অবৈধ চর দখল করে ঘাট নির্মান করে লাখ লাখ টাকা অবৈধ আয় করলেও বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম