এ বছর পবিত্র হজ পরিচালনা শেষে যে অব্যয়িত অর্থ রয়েছে তা হাজীদের ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শুধুমাত্র সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হাজীরা এই অর্থ ফেরত পাবেন।
এ ক্যাটাগরির প্যাকেজের হাজীরা ৪০ হাজার এবং বি ক্যাটাগরির প্যাকেজের হাজীদের ১০ হাজার টাকা করে ফেরত দেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে। তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হাজীরা অর্থ ফেরত পাবেন না বলে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হজে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যান ৫৬ হাজার ৯৫২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৮৯০ জন এবং আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৬২ জন হজে যান।
হজযাত্রা শুরুর মাত্র ১০ দিন আগে গত ২৬ মে সরকারি ও বেসরকারি দুই ব্যবস্থাপনাতেই খরচ ৫৯ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছিল। সৌদি আরবের অংশের ‘খরচ বেড়ে যাওয়ার’ কারণেই বাংলাদেশের হজযাত্রীদের এই বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে বলে তখন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান জানিয়েছিলেন। ৫৯ হাজার টাকা খরচ বাড়ানোর ফলে সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১-এর খরচ বেড়ে হয় জনপ্রতি পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা এবং প্যাকেজ-২-এর হয় পাঁচ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
তখন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্যাকেজ ঘোষণার পর রাজকীয় সৌদি সরকার থেকে অতিরিক্ত কোনো চার্জ আরোপ করা হলে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজযাত্রীকে পরিশোধ করতে হবে। কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকলে তা হাজীদের ফেরত দেওয়া হবে’ এ শর্তে ১১ মে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। করোনা মহামারির কারণে রাজকীয় সৌদি সরকার কর্তৃক হজের ঘোষণার বিলম্বের জন্য এবং সৌদি আরব থেকে প্রকৃত খরচের বিবরণী না পাওয়ায় সম্ভাব্য ব্যয় বিবেচনা করে প্রভিশনাল হজ প্যাকেজ প্রস্তুত করা হয়েছিল।
গত ২৫ মে সৌদি কর্তৃপক্ষ মিনায় অবস্থানস্থলের ভিত্তিতে চার ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে চার ধাপের ব্যয়ের বিবরণ নির্ধারণ করে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যয়ের ধাপ ‘ডি’ ও ‘সি’ অনুযায়ী মোয়াল্লেম ফি ‘সি’ অনুসারে আট হাজার ৬৪০ সৌদি রিয়াল এবং ‘ডি’ অনুসারে সাত হাজার ৪৯০ সৌদি রিয়াল ধার্য করা হয়। উক্ত তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোয়াল্লেম ফি ‘সি’ অনুসারে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৭ টাকা ও মোয়াল্লেম ফি ‘ডি’ অনুসারে ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পায়। তবে উন্নতমানের বাস সার্ভিস, ট্রেন ভাড়া ও বাড়ি ভাড়া থেকে উভয় প্যাকেজে কিছু অর্থ সাশ্রয় করা হয়। উক্ত সাশ্রয় এবং বাংলাদেশের হজযাত্রীদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও হজযাত্রীদের প্রতি বর্তমান সরকারের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে উভয় প্যাকেজে সৌদি আরবে আবশ্যকীয় ব্যয় ৫৯ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তবে এসব ব্যয়ের পরও বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে কিছু অর্থ সাশ্রয় হয়েছে, যা হাজীদের ফেরত দেওয়া হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ক্যাটাগরির প্যাকেজের হজযাত্রীদের ৪০ হাজার টাকা এবং বি ক্যাটাগরির প্যাকেজের হজযাত্রীদের ১০ হাজার টাকা করে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয় বিষয়টি চূড়ান্ত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।’ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে টাকা দেওয়া শুরু করা যাবে বলে তিনি জানান।
হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন ‘হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে’র (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সরকার যেহেতু ব্যবসা করে না তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া হাজীদেরকে অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হাজীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুযোগ নেই।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান জানান, গত মে মাসে হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকলে তা হাজীদের ফেরত দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অব্যয়িত টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। খুব শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়া হবে।’