বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় দলটিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
সমালোচনাকারীরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিবকে অব্যাহতি দিলে খালেদা জিয়া দেবেন। কিন্তু এটি স্থায়ী কমিটি কীভাবে দিতে পারে? প্রেস সচিব তো দলীয় পদ নয়। এটি একটি চাকরি। খালেদা জিয়ার কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ী কমিটি বাতিল করতে পারে না।
মারুফ কামালকে অব্যাহতি দিয়ে একটি চিঠি সোমবার দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গুলশানে চেয়ারপারসনের দপ্তরে ইস্যু করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
এরপর অব্যাহতির খবরের একটি লিঙ্ক মারুফ কামাল খান তার নিজের ফেসবুকে শেয়ার করলে বিএনপির নীতি নির্ধারণীদের নিয়ে সমালোচনায় ফেটে পড়েন দলটির নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
মেজর (অব.) ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘সত্য কথা বললেই অব্যাহতি। কেমন একটা অথর্ব দলে পরিণত হয়েছে বর্তমান বিএনপি। কোনো ব্যাপারেই নেই কোনো আলোচনা, সমালোচনা পর্যালোচনা। আছে শুধু চাটুকারিতা। এ অব্যাহতি আপনার ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুণ্ন হবে না বরং বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি। বিএনপি ঘুরে দাড়াতে পারছে না কেন, তা নিয়ে আরও লিখুন।
মারুফ কামালকে অব্যাহতি দেওয়ার সমালোচনা করে নির্বাসিত লেখক ও সাংবাদিক খোমেনি এহসান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিবকে অব্যাহতির অর্থ খালেদা জিয়াকে মুছে ফেলতে বিএনপির ভেতরকার এজেন্টদের যে অব্যাহত চেষ্টা তার এক নতুন পদক্ষেপ হলো তার প্রেস সচিব সাংবাদিক মারুফ কামাল খানকে অব্যাহতি প্রদান।
তিনি বলেন, সাংবাদিক, কবি ও বুদ্ধিজীবী মারুফ কামাল খান জরুরি অবস্থার সময় বিএনপিকে ভাঙা ও দখল করা ঠেকাতে খালেদা জিয়ার যে অনন্য কৌশল ছিল তার পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন। খালেদা জিয়ার হয়ে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজ পর্যায়ে নানা যোগাযোগ করেছিলেব তিনি। আজ যে মাহমুদুর রহমানকে জানেন লোকজন, খালেদা জিয়ার তরফে তাকে সরব হতে বলেছিলেন মারুফ কামাল খান। খন্দকার দেলোয়ার সাহেবকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে খালেদা জিয়া যে সময়োচিত প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার নেপথ্যেও ছিলেন মারুফ কামাল খান। তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব পদ থেকে অব্যহতি দেওয়ার বিষয়ে সংবাদপত্রে যে খবর বেড়িয়েছে তাতে একটি ভয়াবহ ব্যাপারে উঠে এসেছে।
খোমেনি এহসান আরও বলেন, তথাকথিত স্থায়ী কমিটি নিজেদেরকে খালেদা জিয়ার চেয়ে বড় মনে করছে, এটি সংস্কারপন্থী জমানার এক অসুখ, মনে আছে নিশ্চয় খালেদা জিয়ার বদলে সাইফুর রহমানকে চেয়ারপারসন করার সিদ্ধান্তটি স্থায়ী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে সম্পন্ন হয়েছিল।
নির্বাসিত এ সাংবাদিকের মতে, স্থায়ী কমিটির তরফে খালেদা জিয়ার চেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ হয়ে ওঠার অপচেষ্টা এবার মারুফ কামাল খানকে অব্যহতি দেওয়ার ঘটনায় দৃশ্যমান হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিবকে অব্যহতি দিলে খালেদা জিয়া দেবেন। কিন্তু এটি স্থায়ী কমিটি কিভাবে দিতে পারে? প্রেস সচিব তো দলীয় পদ নয়। এটি একটি চাকরি। খালেদা জিয়ার কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ী কমিটি বাতিল করতে পারে না।
কবি সাইয়্যেদ জামিল লেখেন, ‘এই দলটা ভুলভাল সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অদ্বিতীয়। আমার ধারণা, নিকট ভবিষ্যতে আপনার বিকল্প পাওয়া সম্ভব না।’
চলচ্চিত্র পরিচালক হাসিবুর রেজা কল্লোল বলেন, ‘আপনার বিকল্প হবে না। যোগ্যতায়-প্রজ্ঞায় আপনার সমকক্ষ কাউকে আর পাবে না! এগিয়ে যাওয়ার পথটাও তাদের রুদ্ধ হয়ে গেল! ব্যক্তিগতভাবে আমি শকড্।
মাহমুদুল হাসান নামে একজন লেখেন, ‘আপনি তো প্রেস সচিব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার, খালেদা জিয়া কারাবন্দি এবং শারীরিকভাবেও অসুস্থ, তাহলে অব্যাহতি দিলো কে এবং কেমনে?’
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী লেখেন, ‘এর মানে কি? দলটি নিয়ে যে বা যারা খেলছে, তাদের আমরা মানি না। কোনো রকম অন্যায় মানা হবে না। মেধাবীদের বাদ দেওয়ার সাহস হয় কী করে? মনে রাখা উচিত, অসৎ উদ্দেশ্য কখনোই সফল হয় না। আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুখ থেকে কারণসহ এর সত্যতা শুনতে চাই। সবকিছু মেনে নেওয়া যায় না।’
সাইফুল হাসান নামের একজন লিখেছেন, ‘দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই ভাই, আপনি একজন যোগ্য ব্যক্তি। একদিন দালালগুলো ছিটকে পড়ে যাবে, সময়ের সাথে সাথে আপনার মতো দলের যোগ্য ব্যক্তিরাই দলের প্রাণ হয়ে দাঁড়াবে। দলের ভুলের মাশুল দল কেই দিতে হবে, আমরা না।’
মাশুক রাজিব লিখেছেন, ‘কিছুই বুঝলাম না। সোহেল ভাই কী এমন করলেন, যাতে এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো! বরং উনার লেখায় বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে যা লাখ লাখ নেতাকর্মীদের না বলতে পারা কথাগুলোর অভিন্ন রুপ। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুক।‘
রাজন আলামত নামের বিএনপির এক সমর্থক লিখেছেন, ‘এই অব্যাহতি কেন? কাদের স্বার্থে…দালালরা বরবারই শক্তিশালী তা আবার প্রমাণিত।’
জান্নাতুল ফেরদৌস সারা নামের এক নারী লিখেছেন, বিএনপির মত একটা দলে আপনার মত একজন ডেডিকেটেড সিনিয়রকে এতদিন যে রেখেছিল সেটাই অবাক হবার মতো। এরা পারলে খালেদা জিয়াকে ও অব্যহতির নোটিশ দিয়া দিতো…।’
আমিনুল ইসলাম লিঙ্কন লিখেছেন, ‘দুঃখজনক। যারা দলের জন্য নিবেদিত, তাদেরকেই দল থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সোহেল ভাই প্রথম আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার ছবি এবং তার নাম নাই। হয় তো এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
প্রায় প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন মারুফ কামাল খান। তিনি মন্তব্যকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমার অব্যাহতিতে শকড হওয়ার কিছু নেই। সময়ের দাবিতে আরও যোগ্য, কর্মঠ, সক্রিয় ও বিশ্বস্তকে দায়িত্বে আনার জন্য জায়গা খালি করতেই হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই