খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮
আরিফুর রহমান মিঠুর পদত্যাগ

অব্যাহতির বিষয়টি যেভাবে দেখছেন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রাতে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে নগর বিএনপির ৫ থানা কমিটি। নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়ার সংবাদে হতাশ হয়েছেন তার অনুসারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, খুলনা মহানগর কমিটি পুন:বিবেচনা না করে রাজপথে ত্যাগী নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা অন্যায় ও অবিচার। তারা দ্রুত দলের নীতি-নির্ধারকদের বিষয়টি পুন:মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, শত শত নেতাকর্মী ফোন দিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা ক্ষুব্ধ এই সিদ্ধান্তে হতবাক বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। তারা মনে করছেন না যে এই সিদ্ধান্ত দলের জন্য মঙ্গলজনক। পার্টির এই সিদ্ধান্ত পুন:বিবেচনা করা মূলত: তাদের দাবি এবং আবেদন।

তিনি বলেন, ব্যক্তি কেন্দ্রীক বলয় সৃষ্টির যে প্রবণতা তারই অংশ হিসেবে আমরা মনে করছি, এই ধরনের সিদ্ধান্ত। একজন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতেই আমাদের মতো পোড়খাওয়া, ত্যাগী, সংগ্রামী নেতাদের বাদ দিয়ে মহানগর কমিটি গঠন। আর এই মহানগর কমিটি গঠন পুন:মূল্যায়ন চাওয়ার জন্য এতোদিনের ত্যাগী নেতা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারকা রাজনীতিবীদরা যখন বিএনপির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও বেঈমানী করেছেন, দলের সেই নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুই দলকে কাধে করে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তার প্রতি এই সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর প্রভাব খুলনায় দলের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। আমরা বিএনপির মঙ্গল চাই। আরও বৃহৎ পরিসরে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাতে বিলুপ্ত সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ বলেন, নেতাকর্মীরা হতাশ, মনক্ষুন্ন, প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছেন। অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। শুধু নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষ এই বিষয়টাকে ভালোভাবে নেয়নি। তিনি বলেন, দলের থানা কমিটির নেতারা সবাই একসঙ্গে রয়েছি। সবাই একসাথে সভা করে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

এদিকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু তার প্রতিক্রিয়ায় এই অব্যাহতি তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আজকে অব্যাহতির নোটিশ আমি পেয়েছি। এই অব্যাহতি আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি মনে করি- ৪৪ বছরের যে রাজনীতি আমি করেছি, শহিদ জিয়ার সততা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের প্রতীক বিএনপি। সেই দলের দুর্বৃত্তায়ন রোধে, দুর্নীতিবাজদের রুখতে আমি স্পষ্টভাবে সত্য কথা বলতে সবসময় চেষ্টা করেছি। সমাজের ঘৃণিত ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন এবং সমাজ বিরোধীদের দলের নেতৃত্ব দেওয়ার অশুভ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমি সত্য কথা বলেছি।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে বা কটাক্ষ করে কোন বক্তব্য রাখেননি দাবি করে তিনি বলেন, আমি যেটা করেছি বিএনপির ভালোর জন্য এবং আগামীতে বিএনপি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন হোক, পূন:গঠন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হোক এবং সিন্ডিকেটের হাত থেকে বিএনপিকে রক্ষা করা এখন জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে। যারা বিএনপিকে তাদের সমর্থক গোষ্ঠী বানাতে চায় এবং অসৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সুবিধাভোগী এই শ্রেণির বিরুদ্ধে আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ২৯ পাতার একটি ফাইল জমা দিয়েছিলাম। আবেদনপত্রখানা তদন্ত হবে, আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু কোন কিছু না করেই আমার ওপরে কঠিন শাস্তি আরোপ করা হয়েছে। তাতেও আমার কোন দু:খ নাই। সত্য কথা আমি নিজের জন্য বলিনি, দলের ভালোর জন্য বলেছি। জনগনের দল শহিদ জিয়ার দল, দলের আগামী রাজনীতি যাতে আরও ভালো হয়, স্বচ্ছ হয়, সুগঠিত হয় সেই কথাগুলো আমি বলার চেষ্টা করেছি। আমার ৪৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এই দলের পেছনে সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করেছি।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে দল গঠন ছিল আমাদের স্বপ্ন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সেই কথাগুলোই বলেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে কতোগুলি সুবিধাবাদী লোক, একটি সিন্ডিকেট তাদের পক্ষে দলের কতৃত্ব নেওয়ার জন্য তারা এই দূষণ প্রক্রিয়া চালু করেছে। আমি এর নিন্দা জানিয়েছি, বিচার দাবি করেছি, তদন্ত দাবি করেছি। আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় আমাকে ডাকার জন্য আহ্বান করেছি। কোন কিছুই না করেই আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি এটি আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি আশা করবো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের ভালোর জন্য এবং তার ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার জন্য, সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর হাত থেকে দলকে রক্ষার জন্য, সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আমি ন্যায় বিচার পাবো।

নিজেকে বিএনপির প্রোডাক্ট আখ্যায়িত করে মঞ্জু বলেন, বিএনপির জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। বিএনপিই আমার প্রথম, বিএনপিই আমার শেষ। আশা করবো আমার দল ভুল বুঝতে পারবে এবং আমরা যারা সঠিক ধারায় রাজনীতি করি এবং বিএনপি দেখি, সারা বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা আমাদের পক্ষে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের পক্ষে, আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা কষ্ট পেয়েছেন, বলেছেন তুমি সত্য কথা বলেছো। আমাদের এই স্পষ্ট বক্তব্যের পক্ষে সকলেরই অবস্থান। কিন্তু কেউ সাহস করে কথা বলতে পারছেন না। আমি সাহস করে কথা বলেছি। আমি আশা করবো দল সঠিক জায়গায় সঠিক নেতৃত্বে চলবে এবং ভালো মানুষের দল গঠন করবে। এই সিন্ডিকেট পরাভূত হবে। বিএনপি শহিদ জিয়ার সততা, দেশপ্রেমের এই বিএনপি তার সঠিক ধারায় চালিত হবে।

তিনি বলেন, খুলনায় আমি ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করেই সাহসিকতার সাথে রাজপথে কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করেছি। আমাদের নেত্রী জেলখানায়, তাকে মুক্ত করার দরকার। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে আনা দরকার। দেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সম্পন্ন করার দরকার। এই বিষয়গুলিকে সামনে নিয়েই বিএনপি একটি ভালো মানুষের দল গঠন করবে এবং শক্ত সামর্থ বিএনপি গঠিত হবে, এই আশাবাদ ছিল আমার। আমি এখনও সেই আশায় আছি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সঠিকভাবে খুলনার বিষয়টিকে দেখবেন। তাহলেই আমরা ন্যায় বিচার পাবো।

অপরদিকে বিএনপির কতিপয় নীতি নির্ধারকদের অন্যায় সিদ্ধান্ত, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন দলের নগর শাখার সাবেক কোষাধ্যক্ষ এসএম আরিফুর রহমান মিঠু।

দলের মহাসচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “দলের মূল ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে খুলনা মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠনের অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমি মহানগরের কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দুটি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।”

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!