কয়েক মাসের টানা উত্তেজনা, মুখোমুখি অবস্থান, খণ্ডযুদ্ধ ও হতাহতের ঘটনার পর চীন ও ভারতের মধ্যে লাদাখ সীমান্তে শান্তির পথ উন্মোচিত হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দুই প্রতিবেশী দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিতর্কিত লাদাখ সীমান্তে আর বাড়তি সেনা পাঠানো হবে না। নিকটতম দুই প্রতিবেশী দেশের আর সেনা না পাঠানোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাহাড়-পর্বতবেষ্টিত ও হিমবাহপূর্ণ জটিল তিব্বত সীমান্তে শান্তি ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। (খবর : হিন্দুস্তান টাইমস, রয়টার্স)।
আর সেনা না পাঠানোর জন্য দুই দেশ একমত হলেও ভারত চীনের সঙ্গে সীমান্তে সংঘাত এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ চালিয়ে যাবে। পরিপূর্ণভাবে সামরিক উপস্থিতি দূর ও উত্তেজনা নিরসনের আগ পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেহেতু আর সেনা না পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে, সেহেতু আর এক বা দুই রাউন্ড আলোচনার মধ্য দিয়ে সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে টানাপোড়েনের একটি স্থায়ী সমাধান বের হয়ে আসবে।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সোমবার দুই দেশের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত নিয়ে মতবিনিময়, পারস্পরিক তথ্য বিনিময় ও আলোচনার পর আর সেনা না পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
আর ভারতের প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও ভুল ধারণা এড়িয়ে চলা এবং একতরফাভাবে পরিস্থিতি পরিবর্তন থেকে বিরত থাকার বিষয়ে একমত হয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা।
অবশ্য এখন পর্যন্ত লাদাখ সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন নেই। মে মাসে করোনাভাইরাস মহামারীর মাঝে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং কয়েক মাসের টানা অশান্ত পরিস্থিতি বজায় থাকার পর জুন মাসে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
এতে লাঠি ও রডে নিয়ে পারস্পরিক সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনার প্রাণহানির খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি যুদ্ধংদেহি অবস্থান নেয়। ভারতও চীনের অনেক সেনা হতাহতের দাবি করলেও চীন সীমান্তে হতাহতের কোনো খবর প্রকাশ করেনি।
দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত ইস্যুতে সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সীমান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একাধিক বৈঠক হয়।
সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে মস্কোয় ভারত ও চীনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যকার বৈঠকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং এরই সূত্র ধরে নতুন করে আর সেনা না পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছল ভারত ও চীন।
উল্লেখ্য, ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্ত লাইন অব আ্যকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি নামে পরিচিত। চীন এই এলএসি মানে না বলে দাবি করে থাকে। তবে দুই দেশের মধ্যে লাদাখের মতো জটিল সীমান্তে সরাসরি অস্ত্র নিয়ে না লড়ার বিষয়ে সমঝোতা রয়েছে। এ কারণে সংঘাতের সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে উভয়পক্ষ রড নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা করে জুন মাসে।
সর্বশেষ সমঝোতা অবশ্য লাদাখ পরিস্থিতিকে মে মাসের আগের অবস্থায় নিয়ে যাবে এমন আশা করছে না কেউই। চীন মনে করে, লাদাখের অবস্থাকে মে মাসের আগের শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিতে হলে আরও অনেক আলোচনা-সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণেই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আগ পর্যন্ত ভারতও সমঝোতার পরও সামরিক-কূটনৈতিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।
খুলনা গেজেট/এআইএন