প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের টানা দুই দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অবশেষে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দুর্গাবাটি এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে। বন্ধ হয়েছে খোলপেটয়া নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা।
সোমবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহযোগিতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহনে বাঁশ দিয়ে পাইর্লিং করে ও বালুর বস্তা ফেলে এই বিকল্প রিং বাঁধের কাজ শুরু করা হয়। শেষ দিনে মঙ্গলবার একসাথে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ এই বাঁধ নির্মাণ কাজে অংশ গ্রহণ করেন। এলাকার মানুষের জানমাল রক্ষায় অনেকে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দিনভার বাঁেধর কাজে অংশ নেন। এসময় শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের ও বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম দিনভর উপস্থিত থেকে কাজের তদারকি করেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী আতিয়ার রহমান বলেন, এলাকায় পানি প্রবেশ ঠেকাতে মঙ্গলবার দিনভর সাড়ে তিন হাজার মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প দেখিয়ে টাকা তুলে নেবে। ঝুকিপূর্ন বাঁধ সংষ্কারের পাউবো কর্তৃপক্ষ অগে থেকে কোন উদ্যোগ নেয় না। কোন স্থানে বাঁধের সংষ্কারের কাজ হলেও সর্বোচ্চ ২০ শতাংশের বেশি কাজ হয় না। ফলে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গলে বা সংষ্কার কাজে পকেট ভর্তি হয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। এছাড়া প্রতিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে প্রাথমিক অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারো দেখা যায় না।
তিনি আরো বলেন, এই এলাকার মানুষ নিজেদের জান মাল বাঁচাতে বাঁধ নির্মাণ করে আর পানি উন্নয়ন বোর্ড একাধিক প্রকল্প দেখিয়ে টাকা তুলে নেয়। আমাদের এলাকায় ঝড়ে বা জলোচ্ছ¡াস লাগে না। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি একটু বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। সেনা বাহিনীর তত্ত¡াবধায়নে উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া আমাদের দুঃখের দিন কখনোই শেষ হবে না।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক এবং ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় এলাকাবাসী ও এনজিও শ্রমিকসহ প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার উপকূলীয় মানুষের অংশগ্রহনে দূর্গাবাটির ভাঙ্গন পয়েণ্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ মঙ্গলবার রাতে শেষে হয়েছে। পাউবো’র ঠিকাদারের মাধ্যমে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কার্যক্রম এখনও চলমান রয়েছে। এখন ওই বিকল্প রিং বাঁধে মাটি দিয়ে উচু করা হবে।
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে রিং বাঁধের সম্পূর্ণ করা সম্ভব না হলেও কোন রকমে জোয়ারের পানি যেন লোকলয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রাণপন চেষ্টা করা হয়। এরপরও দুপুরের জোয়ারে সামান্য পানি বালুর বস্তার উপর দিয়ে ওভার ফ্লো হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। তবে রাতের জোয়ার আসার আগেই সাড়ে ১০টার দিকে রিং বাঁেধর কাজ শেষে করে ফেলেছি। আল্লাহর রহমতে এখন আর পানি প্রবেশ করছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতে জোয়ার আসার আগেই বিকল্প রিং বাধের কাজ শেষ হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে রাত ১০ টা ৩০ মিনিটে দূর্গাবাটির ভাঙ্গন পয়েণ্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এলাকায় এখন আর পানি প্রবেশ করছে না। রিংবাঁধ নির্মাণে সহযোগিতা করায় এলাকাবাসীর কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গতঃ খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন ৫নং পোল্ডারের শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দূর্গাবাটি এলাকায় বেড়িবাঁধের ১৫০-১৬০ ফুট অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি ঢুকে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীর পানির স্রোতে ভেসে গেছে ৫ হাজারেরও অধিক মৎস্য ঘের ও কাঁকড়ার খামার। এতে প্রায় সাড়ে ৮কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে ওই এলাকার মাছচাষি ও কাঁকড়া খামারিদের। মিষ্টি পানির পুকুরসহ অসংখ্য কাঁচা পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার একর ফসলী জমি। ধ্বসে পড়েছে প্লাবিত এলাকার অসংখ্যা কাঁচা ঘর-বাড়ি। কাঁচা পাকা সড়ক ডুবে গিয়ে সম্পুর্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হওয়াড গোটা এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। তবে ভাঙ্গ পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করার পর নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা বন্ধ হওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফিরেছে প্লাবিত এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে।
খুলনা গেজেট/ টি আই