ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। অসহায় চোখে উঁকি দিচ্ছেন কংক্রিটের চাঁইয়ের ভেতরে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজছেন নিচে চাপা পড়া সন্তান ও মাকে। এ চিত্র ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহ এলাকার। মঙ্গলবারও সেখানে ইসরায়েলের বোমা হামলায় বহু নারী-শিশুসহ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
অবরুদ্ধ গাজায় এভাবে বেসামরিক মানুষের ওপর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে বলে মনে করছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাবিনা শামদাসানি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজায় প্রতিদিন যুদ্ধসংক্রান্ত আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
গাজার উত্তরাঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার যে নির্দেশ ইসরায়েল দিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করে লোকজনকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে বলে মনে করছেন রাবিনা শামদাসানি। ওই নির্দেশের পর উত্তর গাজা থেকে পালাতে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার সংঘাতের ১১তম দিনে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার মানুষের মরদেহ আটকে আছে। তবে সেখান থেকে তাদের বের করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। খালি হাতেই ভবনের ধ্বংসাবশেষ সরানোর চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনিরা।
মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাজায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১২ হাজার ৫০০। তাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের হাতে ৬১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাদের ঘেরাওয়ের মধ্যে থাকা গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিসংকট চরমে পৌঁছেছে। হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও রক্তের অভাবে চলছে হাহাকার। জাতিসংঘের খাদ্য বিতরণকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ রেশনের খাবার পাচ্ছেন না। পান করতে হচ্ছে দূষিত পানি। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, খুব শিগগিরই উপত্যকাটিতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সূত্র : রয়টার্স ও বিবিসি
খুলনা গেজেট/এইচ