খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ পৌষ, ১৪৩১ | ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক মইনুল ইসলাম বিমানবন্দরে আটক; স্ত্রী সহ কানাডার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন তিনি
  ব্যক্তিগত আয়কর দেয়ার সময় বাড়লো ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ১৫ ফেব্রুয়ারি : এনবিআর

অফিস থেকে পাউবো প্রকৌশলীকে তুলে নিয়ে মারধর, আহত ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগেরহাট

বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে তাঁর কার্যালয় থেকে তুলে নিয়ে মারধর ও লঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে। কার্যালয় থেকে কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন দায়িত্বরত এক আনসার সদস্যসহ দু’জন। আহত আনসার সদস্য নিত্যনন্দকে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর নাক-মুখ ফেটে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে শহরের মদনের মাঠ সংলগ্ন অফিসে কাজ করছিলেন উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ। এসময় ৪টি মোটরসাইকেলে দশজন লোক আসে। বকেয়া বিল না দেওয়ার অভিযোগে আবু হানিফকে হুমকী ও গালাগালি দিতে থাকে তারা। এসময় ওই প্রকৌশলীকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান ডেকেছে বলে হামলাকারীরা তাদের সাথে যেতে বলে।

প্রকৌশলী আবু হানিফ যেতে রাজি না হলে তাকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এসময় অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য নিত্যনন্দ ঠেকাতে গেলে তাকে মেরে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেয় তারা। একই সাথে গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করা হয়। পরে আবু হানিফকে উঠিয়ে নিয়ে শহর রক্ষাবাধ সংলগ্ন বটতলায় নিয়ে যায়। এখানে ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন বলে জানাযায়। তারা একটি কাজের বিল না দেওয়ার অভিযোগে লাঞ্চিত করে আবু হানিফকে। পরে খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের জানায়। ঘন্টাখানেক পরে আবু হানিফকে ছেড়ে দেয় অভিযুক্তরা।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সিসি ক্যামেররার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টার কিছু পরে পর্যায়ক্রমে ৪টি মোটরসাইকেলে দশজন কার্যালয়ের সামনে মোটরসাইকেল থেকে নামে। এসময় তারা ভিতরে প্রবেশ করে প্রকৌশলী আবু হানিফকে খুজতে থাকে। খুজে না পেয়ে উপস্থিত অন্যদের গালাগালি ও হুমকী দিয়ে তারা স্থান ত্যাগ করে। সিসি ফুটেজে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে রাতেই মারধরের শিকার উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ বাগেরহাট মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।  অজ্ঞাতনামাদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন তিনি। এর কারণ হিসেবে আবু হানিফ রাতের অন্ধকারে চিনতে না পারার কথা বললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে তিনি ভয়ে নাম উল্লেখ করেননি।

উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, কাজের চাপ থাকায় অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এসময় কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে তাদের সাথে যেতে বলে। রাজি না হলে মারধর করে জোর করে নিয়ে যায়। ঠেকাতে গেলে অফিসের আনসার নিত্যনন্দ ও গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করে। আমাকে নিয়ে শহর রক্ষা বাধের বটতলায় ঘন্টাখানেক আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের মত করে। তারা আমাকে লাঞ্চিত করার পাশাপাশি গায়েও হাত তুলেছে। এবং তাদের ঠিকাদারী কাজের বিল আটকে রেখেছি কেন তা জানতে চায়। কিন্তু কোন কাজ বা কিসের বিল এইটা আমি সঠিক জানিনা। তবে এই ঠিকাদার কে এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি এই প্রকৌশলী। তবে সূত্র বলছে তিনি সবাইকে চিনলেও অভিযুক্ত সবাই ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হওয়ায় ভয়ে তিনি নাম বলছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগ নামধারী ৮ থেকে ১০ জন মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকে আমার অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে মারধর করছে। পরে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এসময় এক আনসার সদস্যকেও মারধর করে নাক ভেঙ্গে দেয়। সে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। গেট অপারেটরকেও মারছে তারা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে এক পর্যায়ে আবু হানিফকে ছেড়ে দেয় তারা। আমরা এঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি। সিসি টিভি ফুটেজে দোষীদের সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির ও সাধারণ সম্পাদক ওশানের কথা বলে হামলাকারীরা ধরে নিয়ে যায়। তাদের ঠিকাদারী কাজের বিল নাকি বাকি রয়েছে। কিন্তু উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফ তো বিল দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তারা আমার কাছে আসতে পারত, অভিযোগ থাকলে বলতে পারত, কিন্তু তা না করে সরাসরি অফিসে এসে এভাবে হামলা করবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না। উর্ধ্বতনদের নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওশান বলেন, যে প্রকৌশলী অভিযোগ দিয়েছেন তার সাথে আমাদের কিছু লেনদেন ছিল। কয়েকদিন আগে তিনি আমাদের কাছে একটা বড় অংকের টাকা ঘুষ দাবি করে। আমরা ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায়, তিনি আমাদের বিলটি আটকে দেয়। তাদেরকে যদি কোন ঠিকাদার ঘুষ না দেয়, তাহলে তারা ঠিকাদারের বিল আটকে দেয়। এর সাথে এক্সইএন (নির্বাহী প্রকৌশলী)ও জড়িত। গতকাল তাকে ডেকে শুধু কথা বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনই তাকে নিয়ে গেছে। তাকে কোন মারধর করা হয়নি। জোর করে আনা হয়নি, জোর করে আনলে তিনি তো ৯৯৯ বা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারতেন বলে দাবি করেন এই ছাত্র নেতা।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন, প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

খুলনা গেজেট/এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!