স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত ‘জয় বাংলার জয়োৎসব’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: নিউজবাংলা
‘১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, তখন এদেশের মানুষের জীবনে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। তারপর ২০০৯ সালে পুনরায় যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন থেকে এই ১৩ বছর, ১৩ বছরে যে লক্ষ্য আমরা স্থির করেছিলাম, ২০০৮ এর নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২১ এর মধ্যে বাংলাদেশ যাতে মধ্যম আয়ের দেশ হবে।’
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে পাঁচ দশকে যতটা এগিয়েছে, তার পুরোটাই আওয়ামী লীগের কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকি যে ২৯ বছর অন্য দলগুলো দেশ শাসন করেছে, সেই সময়ে দেশ পিছিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা ধরে রাখার প্রত্যয় জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো খেলা কেউ খেলতে পারবে না।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার সন্ধ্যায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সমাপনী উপলক্ষে আয়োজিত ‘জয় বাংলার জয়োৎসব’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি আয়োজিত এ আয়োজনে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র তুল ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে উন্নয়নের যাত্রা যদি আপনারা হিসাব করেন ৫০ বছরের মধ্যে ২৯ বছর কিন্তু উন্নয়ন হয়নি, পিছুটানা আবার পিছনে যাওয়ার সময়।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে উন্নয়নের পথে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন বলে কথা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, তখন এদেশের মানুষের জীবনে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। তারপর ২০০৯ সালে পুনরায় যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন থেকে এই ১৩ বছর, ১৩ বছরে যে লক্ষ্য আমরা স্থির করেছিলাম, ২০০৮ এর নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ২০২১ এর মধ্যে বাংলাদেশ যাতে মধ্যম আয়ের দেশ হবে।’
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সব থেকে বড় কথা, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি।’
শতভাগ বিদ্যুতায়নের সরকারের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আজকে আমরা আলোকিত করেছি। বাংলাদেশ যে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে আমরা ঠিকই সে আলোর পথের যাত্রা শুরু করে সমগ্র দেশের মানুষকে, তাদের প্রতিটি ঘরকে আলোকিত করার সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো খেলা কেউ খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনও কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশ যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ, তা এগিয়ে যাবে।’
আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সরকারের নেয়া পরিকল্পনা, প্রকল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে যেন আর কখনও কেউ অবহেলা করতে না পারে। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। শিক্ষায় দীক্ষায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানে সবদিক থেকে যেন আমরা এগিয়ে থাকতে পারি।’
বঙ্গবন্ধু পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এই এগিয়ে যাওয়া, এই গতি আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
কোনো মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে নিজের অঙ্গীকার আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী ভাষণের কথা ওঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা বক্তব্যের মধ্যে তিনি জানান বাঙালির ওপর অত্যাচার নির্যাতন, শোষণের চিত্র যেমন তুলে ধরেছিলেন, পাশাপাশি আগামী দিনে মুক্তির পথ তিনি দেখিয়েছিলেন।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ২১ বছর ধরে দেশের প্রকৃত ইতিহাসকে আড়াল করে মনগড়া ইতিহাস প্রচার করা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসকে কখনও কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আর সত্যের জয় হয়-ই। এটাকে কেউ কখনও বাধা দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে না। আজকে সেটাই হয়েছে।’
জয় বাংলা জয়োৎসব
আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শুক্রবার গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনারের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ‘জয় বাংলা জয়োৎসব।’
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রাখা হয়েছে গণহত্যা নিয়ে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রোববার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পর্যায়ে কুইজ, রচনা, সংগীত, নৃত্য ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগের পুরস্কার বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি থাকবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে আলোচনা। তারপর থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালা।
সবশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরঝিলে রাত ৮টায় শুরু হবে ড্রোন শো। এর পর থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লাইট অ্যান্ড লেজার শো এবং ফায়ার ওয়ার্কস।
খুলনা গেজেট/এএ