খুলনায় অপচিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ কথিত এক তান্ত্রিক কবিরাজকে গ্রেপ্তার করেছে। বৃহস্পতিবার (২ে১ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন হোটেল প্যারাডাইস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে তার কাছ থেকে চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় এক রোগীকে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার তান্ত্রিক কবিরাজ হলেন, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার হোদখালী গ্রামের জনৈক ছাত্তার খানের ছেলে জসিম খান। তিনি প্রতারনার মাধ্যমে খুলনায় দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
অপচিকিৎসার শিকার ব্যক্তি হলেন, খুলনা ওয়াসার পাইপ মিস্ত্রি মো: আ: ছালাম (৪৮)। তিনি শেখপাড়া বাজার এলাকার শুকুর উদ্দিনের ছেলে।
ভিকটিম ছালামের মেয়ে বলেন, গত একসপ্তাহ আগে ভুয়া তান্ত্রিক কাবিরাজ জসিম খানের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়টি খুব অন্তরঙ্গ ছিল। মুরিদ বানাবে বলে ওই তান্ত্রিককে শেখপাড়া বাড়িতে নিয়ে যান বাবা। এমনকি তাকে সুস্থ্য করে দিবে বলে পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ২০ হাজার টাকা নেয় ওই প্রতারক। এরমধ্যে বাবাকে একবার অপচিকিৎসা দিয়েছেন ওই তান্ত্রিক। চিকিৎসা নেওয়ার পর মঙ্গলবার রাত থেকে বাড়ির লোকজনের সাথে খারাপ আচারণ শুরু করে দেয় তার বাবা। ওইদিন রাতে তাকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়। বুধবার সকালে সে বাড়ি থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন। অফিস থেকে ফুফুর বাড়িতে ফিরে এসে বিভিন্ন অসংলগ্ন কথাবর্তা ও পাগলামি করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাড়ির সকলকে মারধর ও ঘরের জিনিষ পুড়িয়ে পুঁজো করতে থাকেন।
এ অবস্থায় তাকে বেঁধে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তান্ত্রিক জসিম আমাদের বাড়িতে এসে বাবাকে হোটেলের উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে যান। এ সময়ে তিনি বলেন তার চিকিৎসার আমার বাবা সুস্থ্য হয়ে উঠবে। তখন আমরা তার পিছু নিয়ে হোটেল প্যারাডাইসের ৪০৪ নং কক্ষে গিয়ে দেখি বাবাকে বেঁধে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন জসিম খান।ওই সময়ে তার শারিরীক অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর। এ অবস্থা দেখে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে খুলনা সদর থানায় খবর দেই। তখন পুলিশ বাবাকে উদ্ধারসহ ওই তান্ত্রিককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। বাবার অবস্থা আশাঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে খুলনা থানার এস আই রাকিব বলেন, একজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করার জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিলাম্। তখন একটা মেসেজ পেয়ে প্যারাডাইস হোটেলের ৪ তলার একটি কক্ষে যাই। সেখান থেকে ওয়াসার পাইপ মিস্ত্রি মো: আ: ছালামকে মুমুর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করি। পরিবারের সহায়তায় তাকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা করি। এ ঘটনা ওই তান্ত্রিক কবিরাজ জসিম খানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভুয়া তান্ত্রিককে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মুনীর উল গিয়াস। তিনি বলেন, এই কবিরাজ প্রায় ২ মাস ধরে হোটেল প্যারাডাইসের ৪ তলার ৪০৪ নং কক্ষ ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসাছেন। এছাড়া এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে ও মাজারে গিয়ে মানুষের চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের একটি সিন্ডিকেটও রয়েছে। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে প্রতারণা করা হয়।
খুলনা গেজেট/কেডি