দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে কাল রাতে আর্জেন্টিনার কাছে ৬-০ গোলে হেরেছে ব্রাজিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ৬ গোল হজমের পরও হাঁফ ছেড়ে বাঁচার অনুভূতি নিতে পারেন ব্রাজিলের সমর্থকেরা। ৭ গোল তো হজম করতে হয়নি! নইলে যে ফিরে আসত ১১ বছর আগের সেই ‘সেভেন আপে’র দুঃস্বপ্ন।
২০১৪ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে গোলগুলো হজম করায় কম হাস্যরস হয়নি ব্রাজিলকে নিয়ে। একবার ভাবুন তো, গোলগুলো যদি আর্জেন্টিনা দিত তাহলে কী বেকায়দায়-ই না পড়তে হতো! হাঁফ ছেড়ে বাঁচার কথা সে জন্যই বলা।
তাই বলে ছয় গোলের ‘ঘা’টাও লুকোনোর পথ নেই। মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নশিপটির ইতিহাসে এর আগে কখনোই এত বড় ব্যবধানে হারেনি ব্রাজিল। প্রতিযোগিতাটির ৭১ বছরের ইতিহাসে গতকাল রাতের আগ পর্যন্ত ব্রাজিল কখনো তিন গোলের বেশি ব্যবধানেই হারেনি। দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ের এই চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বশেষ কোনো দল ৬-০ গোলে হেরেছিল ২০১৩ সালে। বলিভিয়ার জালে ৬ গোল করেছিল কলম্বিয়া।
তবে ব্রাজিলের জন্য এর চেয়েও বড় যন্ত্রণা অন্য জায়গায়, আর্জেন্টিনার জন্য যেটি মহা আনন্দের। জাতীয় দলের যে কোনো স্তর (অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে সিনিয়র দল) বিবেচনায় ব্রাজিলের বিপক্ষে এটাই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।
এর আগে ১৯৪০ সালে রোকা কাপে ব্রাজিলকে ৬-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা জাতীয় দল। অধুনালুপ্ত সেই প্রীতি টুর্নামেন্টে পাওয়া ওই জয়টাই এত দিন ব্রাজিলের বিপক্ষে জাতীয় দলের যে কোনো স্তরে সবচেয়ে বড় ছিল আর্জেন্টিনার। ৮৫ বছর পর রেকর্ড নতুন করে লিখলেন ক্লদিও এচেভেরিরা।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমে আর্জেন্টিনার কাছে হারকে তাই ‘ভরাডুবি’ ও ‘লজ্জা’ বলে অভিহিত করেছে। আর্জেন্টিনায় বানানো হচ্ছে মিম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি মিম এমন, ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) লোগোর পাশে একটি বিড়াল বসে লোগোটির দিকে তাকিয়ে আছে।
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় মিসায়েল দেলগাদো স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচ হিসেবে এটাই ছিল ডিয়েগো প্লাসেন্তের প্রথম ম্যাচ। গত ডিসেম্বরে হাভিয়ের মাচেরানো ইন্টার মায়ামি কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন প্লাসেন্তে। এবারের দক্ষিণ আমেরিকা অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপেও এটি ছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ।
২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা দলের প্রধান খেলোয়াড়দের রেখে একাদশ সাজিয়েছিলেন প্লাসেন্তে। ১১ মিনিটের মধ্যেই ৩ গোল পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৬ মিনিটে রিভার প্লেটের প্রতিভা ইয়ার সুবিয়াব্রের করা গোলের উৎস ছিলেন ভ্যালেন্তিনো আকুনা। লিওনেল মেসিকে নিয়ে স্প্যানিশ পরিচালক অ্যালেক্স দে লা ইগলেসিয়ার বানানো তথ্যচিত্রে এই আকুনা মেসির চরিত্রে ছিলেন।
৮ম মিনিটে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় গোলটি এনে দেন ম্যানচেস্টার সিটির (এখন ধারে রিভার প্লেটে) ১৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এচেভেরি। তাঁর গোলেরও উৎস ছিলেন আকুনা। তিন মিনিট পর আত্মঘাতী গোল করে বসেন ব্রাজিলের রাইট ব্যাক ইগর সেরাতো। বিরতির পর ৫২, ৫৪ ও ৭৮ মিনিটে আরও তিন গোল করে আর্জেন্টিনা।
অনেকটা প্রথমার্ধের পুনরাবৃত্তির মতোই দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর ৭ ও ৯ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে গোল এনে দেন অগাস্তিন রুবের্তো ও এচেভেরি। শেষ গোলটি সান্তিয়াগো হিদালগোর।
জয়ের পর আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ড এচেভেরি বলেন, ‘দারুণ খেলেছি আমরা। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই আলাদা প্রেরণা জোগায়। আমরা থামব না, আরও উন্নতি করব।’
চিলিতে আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আমেরিকার এই চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শীর্ষ চার দল জায়গা করে নেবে সেই বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে। মোট ১০টি দল ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রুপে ভাগ হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়নশিপে লড়ছে। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ তিন দলকে নিয়ে মোট ছয় দলের রাউন্ড রবিন খেলা হবে। সেখান থেকে শীর্ষ চার দল জায়গা পাবে চিলি বিশ্বকাপে।
খুলনা গেজেট/ টিএ