খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

অনুপস্থিত চিকিৎসকরা, ভেঙে পড়েছে খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভেঙে পড়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা। হাসপাতালের ৪১ চিকিৎসককে অবাঞ্ছিত ও কালো তালিকা করায় বন্ধ রয়েছে বহির্বিভাগের অধিকাংশ সেবা। বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আসেনি বহির্বিভাগের অধিকাংশ চিকিৎসক। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীরা।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) খুলনা মে‌ডি‌কেল ক‌লে‌জের শিক্ষার্থী‌দের এক‌টি অংশ হাসপাতা‌লের ভারপ্রাপ্ত উপ-প‌রিচালক ডাঃ আক্তারুজ্জামান‌কে পদ‌ত‌্যাগ করতে বাধ্য করেন। এ সময় আরও এছাড়া ৪১ জন চি‌কিৎসক‌কে অবা‌ঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থী‌দের নেতৃত্ব দেন কা‌র্ডিও‌লো‌জি বিভা‌গের সহকারী অধ‌্যাপক ডাঃ মোস্তফা কামাল। ফলে আজ বুধবার নিরাপত্তা ঝু‌ঁকি‌তে হাসপাতা‌লে আসে‌নি অনেক চি‌কিৎসক।

হাসপাতালে স‌রেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব‌র্হিবিভা‌গের ২০২ নং রুমের প্রীতম চক্রবর্তী, ২০৯ নং রুমের ডা: হিমেল সাহা, ২০৭ নং রুমের ডা:- অনিরুদ্ধ সরদার, ২০৫ নং রুমের ডা: শেখ তাসনুভা আলম, ২০৪ নং রুমের ডা. সুব্রত কুমার মন্ডল, ২০৩ নং রুমের আরএমও ডা:- সুহাস রঞ্জন হালদার, ২১১ নং রুমের ডা:- দীপ কুমার দাশ, ২১২ নং রুমের আরএমও ডা:- সুমন রায়, ১০৩ নং রুমের ডা. তড়িৎ কান্তি ঘোষ, ৩০৮ নং রুমের ডা. নিরুপম মন্ডল, ২০৪ নং রুমের ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ৪১১ নং রুমের ডা. রনি দেবনাথ তালুকদার, ৪১০ নং রুমের ডা. মিথুন কুমার পাল, ৪১২ নং রুমের ডা. জিল্লুর রহমান তরুণ, ১০৫ নং রুমের চিকিৎসক শিবেন্দু মিস্ত্রিসহ প্রায় ২০ জন চি‌কিৎসক অনুপু‌স্থিত। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকা তারা হাসপাতালে আসেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া আন্ত: বিভা‌গে রে‌জিস্ট্রার সহকা‌রি রে‌জিস্ট্রার কনসালট‌্যান্টসহ আরও ২১ জন চি‌কিৎসক অনুপ‌স্থিত এতে পু‌রো হাসপাতা‌লের চি‌তিৎসা ব‌্যবস্থা ভে‌ঙ্গে প‌ড়ে। দুর-দুরান্ত থে‌কে আসা রোগীরা সেবা না পে‌য়ে ফেরত যা‌চ্ছে।

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা থেকে আসা আরেফিন বিল্লাহ বলেন, বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি সকাল ১০টার দিকে। দুপুর গড়িয়ে আসলেও চিকিৎসক আসেননি। আমি শিক্ষকতা করি, আজ ছুটি থাকায় এসেছি। অথচ এসে চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। শুধু আমি নই, অন্য রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন।

হাসপাতালে আসা রোগী সাদিয়া আফরিন বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছি সেই সকালে এখনও দেখাতে পারিনি। আজ তো দেখাতে পারিনি, আগামীকালও ডাক্তার আসবে কি না জানি না।

ডাক্তারদের রুমের সামনে রোগীদের সিরিয়াল দেখভালের দায়িত্বরতরা জানান, সকালে আমরা এসেছি। এসে দেখি চিকিৎসকরা আসেননি। ফোন করলে তারা জানিয়েছেন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা, এ জন্য আসেননি। রোগীরা আসছেন, আবার ফিরে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুমন রায় মুঠোফোনে বলেন, গতকাল ইনটার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এসময় ডাক্তার মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী এসে আমাদের ঘিরে ধরে। পরে তারা উপপরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। আর আমাদের প্রায় ৫১ জন চিকিৎসককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন৷ ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় আমরা আসিনি।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক মো. ফারুক বলেন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা আমাকে পাঠিয়েছেন, হাসপাতালে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চিকিৎসকদের নিয়ে কোন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে কিনা দেখতে। সকালে আমরা এখানে এসেছি, এসে দেখি ডা. মোস্তফা কামাল নেই। বহির্বিভাগে অনেক রোগী এসে ফিরে যাচ্ছে। এটা কাম্য নয়। আমরা চাই হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনের সহ-সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, গত ১৬ বছর বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তারা নিগৃহের শিকার হোক আমরা চাই না। আমরা জানতে পেরেছি অনেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশ মিটাচ্ছেন। একজনকে সরিয়ে দিয়ে আরেকজনকে বসানোর একটা ফাইদা লোটার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, এখানে বার বার একজন ডাক্তারের নাম উঠে আসছে। তিনি হলেন কার্ডিওলোজি বিভাগের ডা. মোস্তফা কামাল। উনাকে আমরা পায়নি। উনার ব্যাপারেও আমরা তদন্ত করে দেখছি। কাউকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া আমরা সমর্থন করি না। কাউকে সরাতে হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তদন্ত সাপেক্ষে ধাপে ধাপে করতে হবে। একদিনেই ৪০ জনকে সরিয়ে দিব, এতে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হবে। পুরো খুলনা বিভাগে এর প্রভাব পড়ছে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি, স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গেও কথা বলবো। এখানে ২টা পার্ট রয়েছে, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা। শিক্ষা পার্টের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এই কাজটি করেছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার নেই, এখানে খুলনা বিভাগের নাগরিক ও রোগীদের অধিকারটাই বেশি। আমরা এখানে সুষ্ঠু সমাধানে একটি ভূমিকা রাখতে চাই।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!