নৌপথে সন্ত্রাস বন্ধ, বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী পণ্যবাহী নৌ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। তবে ধর্মঘটের আওতামুক্ত আছে যাত্রীবাহী নৌযান।
চট্টগ্রামে নৌ শ্রমিকদের ঐক্য পরিষদ সভাপতি শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতনের বাইরে খোরাকি ভাতা দেওয়ার জন্য জাহাজ মালিকদের কাছে দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত বছরের নভেম্বরে ধর্মঘট চলাকালীন এক বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার শর্তে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। দীর্ঘ এক বছরেও শ্রমিকদের দাবি পূরণ না করায় লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
নৌযান শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিয়োগপত্র দেওয়া, প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, খাদ্যভাতা দেওয়া, ভারতগামী নৌযানের শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেওয়া, কর্মরত অবস্থায় কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া, নৌপথে নাব্য রক্ষা এবং নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও পুলিশি নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো. বাহারুল ইসলাম বাহার জানান, ১১ দফা দাবি নিয়ে গতকাল রাতে ঢাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যানের সঙ্গে মালিক ও শ্রমিকদের বৈঠক হয়। গভীর রাত পর্যন্ত এ বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই গতকাল মধ্যরাত থেকে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালে কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে।
বাহারুল ইসলাম আরো জানান, ১১ দফা দাবি নিয়ে গত দুই বছরে নৌযান শ্রমিকরা তিনবার কর্মবিরতি পালন করেছেন। এরপর শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মালিক-শ্রমিক বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা মেনে নেয়নি মালিক সমিতির কতিপয় নেতারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ দফায় মধ্যরাত থেকে আবারও কর্মবিরতি পালন শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মবিরতি পালন করছেন পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকরা। কর্মবিরতির আওতায় থাকছে না যাত্রীবাহী নৌযান। সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার পণ্যবাহী নৌযানের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক এ কর্মবিরতি পালন করছেন। তিনি আরো বলেন, ‘নৌযান মালিক সমিতির কতিপয় নেতা দাবি পূরণ না করে নানা ধরনের টালবাহানা করে আসছেন। আর এতে করে নৌযান শ্রমিকরা করোনাকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছেন।’
এদিকে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় মোংলা বন্দরের পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ স্বাভাবিক রাখতে নৌযান শ্রমিকদের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘কর্মবিরতিতে প্রভাব তো একটু পড়বেই। বিশেষ করে বন্দরের আউটারবারে যেসব জাহাজ রয়েছে, সেগুলো থেকে খালাস ও পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরও বিষয়টি যাতে দ্রুত সুরাহা করা যায়, সে জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি সমাধান হয়ে যাবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম