খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট
  চাঁদপুরে জাহাজে ৭ জনকে হত্যা: আসামি ইরফান ৭ দিনের রিমান্ডে

অনলাইন ক্লাসে উচ্চবিত্তের সন্তানরা সুবিধা পেলেও বঞ্চিত হচ্ছে অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা ভাইরাস মহামারিতে খুলনায় চলমান অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন থাকা উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ক্লাস করা থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশায় ভুগছে নিম্নবিত্ত কিংবা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারের শিক্ষার্থীরা।

তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এনড্রয়েড ফোন না থাকার কারণে যারা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে না তাদের জন্য বাসায় হ্যান্ড নোট দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

করোনা ভাইরাসের এ সময়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরকার সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান কর্মসূচি চালাচ্ছে। এর পাশাপাশি খুলনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবে নেয়া হচ্ছে ক্লাস। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল প্রাইমারি এডুকেশন খুলনা ও ডিজিটাল সেকেন্ডারি এডুকেশন খুলনা নামে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে চলছে এ কার্যক্রম।

খুলনা সদরের মহেশ্বরপাশা কার্তিককুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হেমায়েত শেখ বলেন, “ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোই কষ্টকর। দুইটা ছেলেকে লেখা পড়ানোর মতো টাকা আয় করতে পারি না। আর অনলাইনে ক্লাস তো দূরের কথা। যারা ধনী তারা ওইসব ক্লাস করুক।”

মহানগরীতে সিটি করপোরেশন পরিচালিত সিটি গালর্স স্কুলের তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দেড় শ’। তার মধ্যে এনড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে ক্লাসের সুবিধা পাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে ২৫ জনের মতো। এ হিসেবে মাত্র ১৭ জনের বাসায় স্মার্টফোন রয়েছে। এ চিত্র প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই। এ অবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হচ্ছে জেলা প্রশাসনের চালু করা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে।

খুলনা সদরের কেএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সৈয়দ আনিসুজ্জামান বলেন, সকল শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাবে না। অনেকের সংসদ টিভি দেখারই সুযোগ নেই সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে আন্তরিক হতে হবে। অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষভাবে খোঁজ খবর নিতে হবে।

ফুলবাড়ি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারীকালে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়, আর আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির কারনে সকল শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পাবে সে প্রত্যাশাও করা ঠিক না।

অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই, কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন থাকলেও অর্থাভাবে ইন্টারনেট সেবা নেই। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সেবা থাকা সামান্য কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে এ অনলাইন শিক্ষা আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারছে না। ক্লাসে আই কন্টাক্টে শিক্ষার্থীকে আগ্রহী করা হয়। কিন্তু এ গতানুগতিক অনলাইন শিক্ষায় আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। এর ফলে অনলাইন শিক্ষার সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই অনলাইন ক্লাসে সাফল্য পাচ্ছে না সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সফল হওয়া দুষ্কর।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম সিরাজুদ্দোহা বলেন, “যেসব শিক্ষার্থীর এনড্রয়েড ফোন নেই তারা এ ক্লাসের সুবিধা পাবে না। তবে সবাই এই সুবিধা পাবে সে কথা বলা যাবে না।”

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার রুহুল আমিন বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ইন্টারনেট ব্যবহার করবে এবং এনড্রয়েড মোবাইল ফোন থাকবে তারাই শুধু এ ক্লাসের সুবিধা পাবে।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মাঈনউদ্দিন হাসান বলেন, “এখন প্রতিটি পরিবারেই এনড্রয়েড ফোন আছে। পরিবারের কারও না কারও এ ফোন আছে। আর একেবারে যাদের নেই তাদের বাসায় এ ক্লাসের হ্যান্ড নোট দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রাখতে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা চালু করা হয়েছে। সবার কাছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা নেই, তা ঠিক। কিন্তু সংসদ টিভি যত লোক দেখে তার চেয়ে বেশি লোকের হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা আছে। তাই সংসদ টিভির চেয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে অনলাইন শিক্ষা বেশি সফল হবে বলে তিনি জানান।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!