দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর সর্বশেষ ইউজিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি মিলেছে। কিন্তুু বিশ্ববিদ্যালয় গুলো পড়েছে বিপাকে অনলাইন পরীক্ষা নিবে নাকি সশরীর পরীক্ষা নিবে এমন সিদ্ধান্তে দিধাদ্বন্দে ভুগছে তারা। ইতোমধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আবার কিছু সশরীরে পরীক্ষা নিবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তুু শিক্ষার্থীরা কি ভাবছে?? এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন খুলনা গেজেটের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি রাজু আহমেদ।
অনলাইনে নয় বরং সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া উচিত
কোভিড-১৯ এ বাংলাদেশে যে খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা হলো শিক্ষাখাত।প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত লাখ লাখ শিক্ষার্থী আজ ঘরবন্দী হয়ে এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে দিন গুনছেন।এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছেন।তবে অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ধরন,ইন্টারনেটের গতি,ডিভাইস না থাকা, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য সহ নানান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে চিন্তিত।অন্যদিকে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রমের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন,যাদের পক্ষে কোনো ভাবেই অনলাইনে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা সম্ভব না।সুতরাং শিক্ষার্থীদের উন্নত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অতি দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
মুহিব মাহমুদ
রসায়ন, ৩য় বর্ষ।
অনলাইনে পরীক্ষা, চাই নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কের সুব্যবস্হা
অনলাইন পরীক্ষার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।কেননা সবার একটি ভালোমানের ডিভাইস ক্রয় করার ক্ষমতা নেই, আবার কারো কারো কাছে ভালোমানের ডিভাইস থাকলেও নেই নেটওয়ার্ক’র সুব্যবস্থা।যারা গ্রামে আছেন,তাদের সবার পক্ষে শুধু অনলাইন পরীক্ষার জন্য শহরে বাসা নেওয়াও সম্ভব না। তাই সকল শিক্ষার্থীর কথা মাথায় রেখেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।তাই পরীক্ষা হোক, তবে সেটা সশরীরে ক্লাসরুমে উপস্থিত হয়ে। কেউ খাবে তো কেউ খাবে না এমনটা জানি না হয়।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী অনলাইন মূল্যায়ন কখনও একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধাকে যাচাই করতে পারে না। এর মাধ্যমে অনেক ভালো শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস না করার কারনে পিছিয়ে যাবে।যার মাধ্যমে এসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিজের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে হতাশায় ভুগতে আছে।
পারভেজ হাসান
রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ১ম বর্ষ
সশরীরের পরীক্ষার বিকল্প নাই
“শিক্ষার্থীদের ফিরতে দিতে হবে তাদের নিজ ক্যাম্পাসে, বাঁচাতে হবে তাদের স্বপ্নে গড়া ভবিষ্যৎ ”
আচ্ছা যদি বলা হয়, হৃৎপিণ্ড দেহ থেকে বাইরে বের করে রেখে দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে তাহলে কেমন হবে?
হৃৎপিণ্ড ছাড়া যেমন মানব দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করার কথা কল্পনাও করা যায় না, ঠিক তেমনিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর কাছে পরীক্ষা ও কল্পনা করা যায় না!পরীক্ষা বলতে একজন শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট ক্লাসরুম, নির্দিষ্ট সিট,আর শিক্ষকের কড়া নজরের মধ্যে মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর লিখে খাতা জমা দেওয়াকেই বোঝে! বাংলায় খুব প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে” হট্টমালার দেশে,গাই-বলদে চষে” অর্থাৎ হ-য-ব-র-ল অবস্থা, অনলাইনে পরিক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তটিও তেমনি।তাই অনলাইনে নয়,যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিক্ষা নেওয়াই যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।
সিরাজুম মনিরা
সমাজবিজ্ঞান, ৩য় বর্ষ
ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে পরীক্ষা নিতে হবে
করোনার কারণে দীর্ঘদিন যাবত আমরা ঘরবন্দি।ব্যাহত হয়েছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন।এমতাবস্থায় আমাদের পড়াশোনা সচল রাখার জন্য সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হতে পারে অনলাইন ক্লাস/পরীক্ষা পদ্ধতি।
এই মহামারির মধ্যে সশরীরে পরীক্ষা দেওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।করোনার প্রকোপ ও ওঠানামা করছে দিন দিন।আমাদের মধ্যে এই সংকট বেড়েই চলেছে।উদাহরণস্বরূপ রাজশাহীর করোনার প্রকোপ এত বেশি দেখা যাচ্ছে যে তাদের একটি স্থানীয় হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৮ জন এবং নতুন করোনা আক্রান্ত রোগী এসেছেন আরও ১৬ জন।যা সবার জন্যই হুমকি স্বরূপ।
অন্যদিকে আমাদের যুগ প্রযুক্তির যুগ।এই যুগের মোটামুটি সব ছেলেমেয়েরাই মোবাইল ফোন/কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে জানে।
বর্তমানে অনেক কম মূল্যে আমরা এসবের আওতাভুক্ত হতে পারি এবং অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা দিয়ে ঝুঁকি থেকে এড়িয়ে থাকতে পারি।
মারুফ আহমেদ খান
অর্থনীতি, ২য় বর্ষ
যেভাবে হোক পরীক্ষা নেওয়াটা জরুরী
আমরা এখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, এক অশুভ শক্তির সঙ্গে আমাদেরকে ডরে যেতে হচ্ছে। কথায় আছে, হৃদয় যত ব্যাথিত থাক কর্ম সঞ্চাল চলিতে থাকে। সুতরাং পরিস্থিতি যত খারাপ হোক না কেনো আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। সবকিছু সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে।
বর্তমানে আমাদের দেশে সব কিছু চলছে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলছে না, এতে করে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিনের সেশনজট নিরসনের একটামাত্র মাধ্যম হলো পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া, সেটা অনলাইন হোক কিংবা অফলাইনে। সুতরাং সবার আগে পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেওয়া উচিত এবং সাথে সাথে পরিকল্পনা নিয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবি হয়ে গেছে।
সোনিয়া জামান
আইন, ২য় বর্ষ
খুলনা গেজেট/ টি আই