যশোরের অভয়নগরে এস এস কলেজ অধ্যক্ষের খামখেয়ালিপনা ও গাফিলতিতে এইচ এস সি পরিক্ষার্থী এক বিবাহিত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিক্ষার মাত্র এক দিন আগে শনিবার সে জানতে পারে তার ফরম ফিলাপ হয়নি। এ নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ওই অধ্যক্ষের সাথে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে অভিভাবকদের সাথে ধস্তাধস্তিও হয়েছে। যদিও অধ্যক্ষ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের ভুলে ফরমফিলাপ হয়নি বলে দাবি করেছেন ।
এদিকে ফরম ফিলাপ না হওয়ায় কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন উপজেলার আলীপুর গ্রামের আসাদুল হকের মেয়ে ধোপাদী এস এস কলেজের শিক্ষার্থী আসমা খাতুন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ধোপাদী এস এস কলেজের অধ্যক্ষ এস এম শহিদুল ইসলাম কারসাজি করে আমার ফরম ফিলাপ করেন নি। উল্টো পরিক্ষার প্রবেশ পত্র আমার বাড়ি পৌছে যাবে বলে সপ্তাহ ব্যাপী আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। এখন আমি শ্বশুর বাড়ি মুখ দেখাবো কি করে?
শিক্ষার্থী আসমা বলেন, ২০২০ সালে নওয়াপাড়া রাজটেক্সটাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস এসসি পাশ করি। যার এস এস এস সি রোল ৫০৪৩৬৯, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৭১৩২৩১৭৭৯। এর পর ওই বছরেই ধোপাদী এস এস কলেজে ২০২০-২০২১ শিক্ষবর্ষের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হই। প্রথম বর্ষ পার করার পর পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে হয়। নির্বাচনী পরীক্ষাসহ কলেজের সকল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছি। ফরম পূরণের ফিসসহ কলেজের যাবতীয় ফিসও পরিশোধ করেছি। গত এক সপ্তাহ আগে কলেজের সকল পরিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র হাতে পেয়েছে। কিন্তু আমার প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। সেই থেকে রোজ অধ্যক্ষ স্যারকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘জরুরী কাজে ঢাকায় আছেন, এসেই বাসায় প্রবেশ পত্র পৌছে দেবেন।’ কিন্তু পরিক্ষার আর মাত্র একদিন বাকি ফলে আমিসহ পরিবারের সকলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি।
শনিবার সকালে অধ্যক্ষ স্যারকে ফোন করে কলেজে আসতে চাইলে তিনি কলেজে আসতে নিষেধ করে প্রবেশ পত্র বাড়ি পৌছে যাবে বলে একই কথার পুণরাবৃত্তি করেন। বিষয়টি আমার বড় ভাই রবিউল ইসলাম জানতে পেরে তিনি সকাল ১০ টায় আমাকে নিয়ে কলেজে যান। এসময় অধ্যক্ষ এলোমেলো কথা বলতে শুরু করেন। পরে খোজঁ নিয়ে জানতে পারি উনি ২০২০ সালে আমার রেজিস্ট্রেশনে সহি-স্বাক্ষর নিলেও ২০২১ সালে এসে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। ফলে আমি ২০২৩ এর পরিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে আমার ভাই অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার ভাইয়ের উপর চড়াও হন। এসময় কলেজ ক্যাম্পাসে স্যারের সাথে হাতাহাতি হয়।
আসমা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ওই কলেজে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। এ কারণে অধ্যক্ষ কারসাজি করে পরের বছর স্টুডেন্ট দেখানোর স্বার্থে আমার রেজিস্ট্রেশন এক বছর পরে করিয়েছেন। আমার জীবনের একটি বছরই কেবল কেড়ে নেননি। আমার গোটা জীবনটাই উনি তছনছ করে দিয়েছেন। আমার পড়া লেখা এখন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না। আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর কোন পথ খোলা নেই।
এ ব্যাপারে ধোপাদী এস এস কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে এক অভিভাবকের সাথে ধস্তাধস্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ওই অভিভাবক তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। আসমা খাতুনের ফরম ফিলাপ প্রসংগে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে আর কলেজে আসেনি। ভর্তির সময় সাবজেক্টও চয়েস দেয়নি। এ কারণে তাদের ভুলের জন্য ২০২০ সালে তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ২০২১ সালে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তার ফরম ফিলাপ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রবেশপত্র বাড়ি পৌঁছে দেয়া প্রসংগে তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থীর পীড়াপীড়িতে বলেছিলাম চেষ্টা করে দেখি কোনভাবে ফরম ফিলাপ করা যায় কিনা। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি।
খুলনা গেজেট/ টি আই