অটোপাসের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ‘পড়াশোনা ছাড়া কীভাবে অটোপাস দেবো? যদি স্কুল খুলতে দেরি হয়, তাহলে পরীক্ষা পরে নেবো। তাতে এমন কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।’
আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে কর্মরত ১৫টি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘নিরাপদ ইশকুলে ফিরি’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে যারা এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন, সারা দিন মোবাইলে ম্যাসেজে, হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন। অনেকেই হুমকি-টুমকি দিয়েও ম্যাসেজ দেন। অটোপাস না দিলে এটা করে ফেলব, সেটা করে ফেলব।’
২০২০ সালের এইচএসসিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে ফলাফলের প্রসঙ্গ তুলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালে যারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন, তারা ভালো করে পড়াশোনা করেছেন। পুরোপুরি নিজেরা তৈরি হয়েছে। ঠিক পরীক্ষার আগে পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে, এতে ওদের কোনো দোষ নেই। তারা পরীক্ষায় তাদের মেধার পরিচয় দিতে পারত। তাদের আগের দুটো পরীক্ষায় ঘটাতে পেরেছে। সেটার ওপর ভিত্তি করে ফলাফল দেওয়া হয়েছে।’
অটোপাসের দাবির আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার যাদের পরীক্ষার দেওয়ার কথা আপনাদের সমীক্ষা অনুযায়ী তাদের অধিকাংশই ক্লাস করেনি। আমাদের সমীক্ষা অবশ্য ভিন্নরকম। সরকার আর এনজিওর তথ্যের মধ্যে অনেক সময় অনেক তফাৎ থাকে কারণ উদ্দেশ্যও ভিন্নরকম।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি আপনাদের (এনজিও) ধরে নেই যে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস থেকে তেমন কোনো সুবিধা পায়নি। তাহলে পড়াশোনা ছাড়া কীভাবে অটোপাস দেবো বলেন? সেটার তো সুযোগ নেই। এখন সব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। আমরা কি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষ দিকে খোলার সুযোগ পাবো? নাকি মার্চ মাসে খোলার চেষ্টা করব। আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেবো না। যতক্ষণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকবে ততক্ষণ খুলবো না। যখন মনে করবো ঝুঁকিটা খুবই কম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিরাপদভাবে খোলা যায়, তখন খুলব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি মার্চের গোঁড়ায় খুলতে পারি, তাহলে আমরা একটি হিসাব করেছি, কতদিন পর এসএসসি পরীক্ষা নিলে তাদের শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হবে না। বিঘ্নিত হবে না। তাহলে আমরা কতগুলো কার্য দিবস পাবো, ক্লাস পাবো, সেই হিসেবে, নতুন করে সিলেবাস প্রণয়ন করেছি। কোন কোন বিষয় শিক্ষার্থীর জানাটা অত্যাবশ্যক সেটা মাথায় রেখে এসএসসির জন্য ৬০ কর্মদিবসের সিলেবাস তৈরি করেছি। অনেক বিষয় আছে আগের ক্লাসে পড়েছে এবং পরের ক্লাসে আবারও পড়বে সে সব বিষয় মাথায় রেখেছি করেছি। এইচএসসির ক্ষেত্রে আমরা ৮৪ কার্যদিবস করেছি। যদি স্কুল খুলতে দেরি হয় তাহলে পরীক্ষা পরে নেবো। তাতে এমন কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। তারপরও তাদের পরবর্তী যাওয়াটা সমস্যা হবে বলে আমরা মনে করছি না।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন-মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ, ইউনিসেফের উপ-প্রতিনিধি ভিরা মেন্ডোনকা, বাংলাদেশের কানাডার হাইকমিশনের হেড অব ডেভলাপমেন্ট অ্যাসিট্যান্স ফেদ্রা মুন মরিস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সেভ দা চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি) রিফাত বিন সাত্তার এই ক্যাম্পেইনের পটভূমি এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আলোকপাত করেন। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোরশেদ। ওয়ার্ল্ড ভিশনের পরিচালক টনি মাইকেল অনুষ্ঠানটি সমন্বয় ও সঞ্চালনা করেন।