খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ৮ জনকে রিমান্ডে

গেজেট ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ৫২ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাশেমসহ ৮ জনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার বিকেলে পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খানমের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। এ সময় আদালতের বিচারক তাদের বিরুদ্ধে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। এদিকে এই ঘটনায় কারখানা মালিক ও সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেমসহ ৮ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলার বাদী হয়েছেন রূপগঞ্জ থানাধীন ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) নাজির উদ্দিন মজুমদার। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫/২০ জনকে।

আসামিরা হলেন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম, তার ছেলে হাসিব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহিম, তওসিফ ইব্রাহিম, তানজিব ইব্রাহিম, শাহেন শাহ আজাদ, মামুনুর রশিদ ও মো. সালাহউদ্দিন।

এদিকে ৫২ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করলেও একটিবারের জন্যও আসেননি সজীব গ্রুপের মালিক এমএ হাসেম। রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুড লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দুদিন পার হলেও তার দেখা বা বক্তব্য পাননি গণমাধ্যমকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার পর রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস-এর ‘সেজান জুস’ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ১১০ জন সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন।

শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরই শুরু হয় মরদেহ উদ্ধারের কাজ। আগুনের ঘটনায় ৫২ জন নিহত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অধিকাংশ মরদেহই কারখানার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা থেকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

কারখানার শ্রমিক ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, কারখানাটি তিন শিফটে পরিচালিত হতো। সেখানে কাজ করেন দুই হাজারের বেশি শ্রমিক। কারখানাটিতে সেজান জুসের কর্ক ও লেভেল প্যাকেটিংয়ের কাজ করা হতো। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত ঘটে নিচ তলায়।

ভবনটির ছাদ থেকে ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। তবে জীবন বাঁচাতে গিয়ে অনেক শ্রমিক ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আহত হন। নিহতও হন কয়েকজন, যাদের হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে আগুন লাগা ভবনটি নিয়ে বিস্তর অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল, ওই ভবনের চারতলায় তালাবদ্ধ থাকা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র না থাকায় এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া ভবনটি কোনো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়নি- এমন অভিযোগও উঠেছে স্থানীয় পর্যায়ে। কিন্তু অভিযোগগুলো সত্য নয় বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে, শনিবার সকাল ৭টা থেকে ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই দুই তলায় কোনো লাশের সন্ধান মেলেনি বলে জানা গেছে।

কারখানার ব্যাপারে ওঠা বেশ কিছু অসঙ্গতির অভিযোগ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন শুক্রবারই বলেছেন, ভবনে চারতলায় সিঁড়ির গেট তালাবদ্ধ থাকায় সেখানে আটকা প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে।

আগুন নেভানোর পর তারা চারতলায় তালাবদ্ধ থাকায় ওই তলার একটি জায়গাতেই ৪৯ জনের মরদেহ পেয়েছিলেন। তাছাড়া কারখানার ভবনে আগুন নেভানোর বা অগ্নিনির্বাপণের তেমন ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টিও স্বীকার করেছিলেন এই ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা।

তবে এ সব অভিযোগই মিথ্যা বলে দাবি করেছেন কাজী রফিকুল ইসলাম নামের সজীব গ্রুপের একজন ম্যানেজার। তিনি একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে দাবি করেছেন, ‘ইকুইপমেন্ট (যন্ত্রপাতি) এনাফ (যথেষ্ট) পরিমাণ ছিল। অ্যালার্ম দেওয়ার জন্য সবকিছু ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিচতলায় আগুন ধরার কারণে পুরোটা ছড়িয়ে গেছে।’ চারতলায় তালাবদ্ধ থাকার বিষয়টিও সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটি মিথ্যা কথা, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। যখন নিচতলায় আগুনটা ধরেছে, তখন সবাই আতঙ্কে ওপরে চলে গেছে।’

ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান এবং দায়ীদের খুঁজে বের করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং শ্রম অধিদফতরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!