দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী মধ্য অক্টোবর (১৫ অক্টোবরের পর থেকে) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুলতে পারবে। তবে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিকা ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া ও না দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ চিত্র জানাতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের এমন পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয় এ সভা। সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ছিলেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র সংবাদ মাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। উপস্থিত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ওপর বিষয়টি বিবেচনা করে ১৫ অক্টোবরের পর থেকে খুলতে পারবে।
আরেকজন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখন নিম্নমুখী। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগে খুলে দেওয়া হবে। তবে করোনা পরিস্থিতি যদি অবনিত হয় তাহলে আবার ভিন্ন চিন্তা করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপাচার্য বলেন, পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে ১৫ অক্টোবর বা তার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা হবে। উল্লেখ, ১৫ অক্টোবর শুক্রবার।
উল্লেখ,সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যার যার আইনে চলে। শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা। যদিও তারা সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করেনি।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরেক দফায় বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ছুটি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ল। আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, এ ছুটি ছিল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে করোনা মহামারির পুরোটা সময়জুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম। দীর্ঘ বন্ধের ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যত বেশি সময় ধরে শিশুরা বিদ্যালয়ের বাইরে থাকবে, সহিংসতা, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এতে তাদের ততই স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমে যাবে।
সরকারের মধ্যেও এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ আগস্ট সচিব সভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং টিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে। ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার খোলার পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা চাচ্ছেন তাড়াতাড়ি স্কুল খুলে দিতে। প্রধানমন্ত্রী দুটি মিটিংয়ে বলেছেন। মন্ত্রণালয়সহ সবাই মিলে স্কুলগুলো সুন্দর রাখা হচ্ছে, যাতে যেকোনো সময় স্কুল খুলে দিয়ে কাজ করা যায়। করোনা পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হলে হয়তো খোলা যেতে পারে। যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিলে, তারা প্রস্তুত আছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, তাদের পরিকল্পনা হলো, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া। পরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা।