খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৫ সালের ৮ জুন। ২১৫ সদস্যের কমিটির অধিকাংশই এখন ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন যুবলীগের পদ পেয়েছেন সাড়ে ৪ বছর আগে। আড়াই বছর আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক হয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল। নেতৃত্বশূন্য খুলনা মহানগর ছাত্রলীগে গত ৪-৫ বছর ধরে চলছে স্থবিরতা।
তবে, দীর্ঘ ৯ বছর পর ইউনিটকে গতিশীল করতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নতুন কমিটি গঠনের জন্য জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আগামী মাসের মধ্যে কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
জানা গেছে, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় এক ডজন নেতা আবেদন করেছেন। পদ পেতে শুরু হয়েছে ‘লবিং’। তারা নিজেদের বিভিন্ন নেতার প্রার্থী হিসেবেও প্রচার চালাচ্ছেন। অবস্থা এমন যে, গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেল খুলনার স্থানীয় দৈনিকগুলোতে বিজ্ঞপ্তিতে দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন– কোনো সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকা নেই। বিশেষ কোনো নেতা কিংবা কর্মীর প্রতি দুর্বলতা নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন হবে।
এদিকে নতুন কমিটি গঠনের সংবাদে প্রাণ ফিরেছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের মাঝে। দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীর আনাগোনা বেড়েছে। কর্মসূচিতে বেড়েছে উপস্থিতি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২১৫ সদস্যের মহানগর কমিটির অধিকাংশ নেতাই ছাত্রজীবন শেষ করেছেন। বাকি কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী। মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধে এ পর্যন্ত বহিষ্কার হয়েছেন প্রায় দেড় ডজন নেতা। যারা সক্রিয়, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় তারাও ভুগছিলেন হতাশায়।
সূত্র জানায়, সব পদপ্রত্যাশীর জীবনবৃত্তান্ত চাওয়ায় সহসভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে আবেদন জমা পড়েছে। এ ছাড়া আবেদন উন্মুক্ত থাকায় ছোট-বড় সবাই আবেদন করেছেন। যে কারণে পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহীর সংখ্যা হাতেগোনা।
জানা গেছে, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি পদে বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদুল ইসলাম সুজন, মাসুদ হোসাইন সোহান ও সজল বাড়ৈ, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাহমুদুর রহমান রাজেশ, এ মে হোসাইন সবুজ ও সোনাডাঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রুমান আহম্মেদ আবেদন করেছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহান ইসলাম শাওন ও ইবনুল হাসান, বিএল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিশাত ফেরদৌস অনি ও শেখ শাহরিয়ার রহমান রাহুল।
এ ব্যাপারে মাহমুদুল ইসলাম সুজন বলেন, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে রাজপথে সক্রিয় রয়েছি। আমাদের অভিভাবকরা রয়েছে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
মাসুদ হোসাইন সোহান বলেন, স্কুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রলীগ শুরু করি। রাজপথে আমার ভূমিকা দেখে দল সিদ্ধান্ত নেবে।
সজল বাড়ৈ বলেন, আমাদের অভিভাবক পরিবার রয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তই মেনে নেব।
শেখ মাহমুদুর রহমান রাজেশ বলেন, ২০০৯ সালে সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলাম। সেই থেকে প্রতিটি নির্বাচন ও আন্দোলনে প্রথম সারীতে ছিলাম। দল এটা বিবেচনা করবে বলে আমার বিশ^াস।
এম এ হোসেন সবুজ বলেন, দলের দুঃসময়ে আমরাই রাজপথে ছিলাম। আশা করছি মূল্যায়ন পাব।
রুমান আহম্মেদ বলেন, রাজপথে সক্রিয় আছি, আশা করছি কমিটিতেও থাকবো।
সোহান ইসলাম শাওন ও ইবনুল হাসান বলেন, প্রতিটি কর্মসূচিতে আমরা সামনের সারীতে ছিলাম। দল সেটা মূল্যায়ন করবে আশা করি।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাই ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে খুব দ্রুত কমিটির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়