মুক্তিযুদ্ধে কোন শ্রেণির অবদান বেশি? স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও এ প্রশ্ন অমীমাংসিত। এ নিয়ে হয়নি তেমন কোনো গবেষণাও। ফলে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন অধ্যায়ে ঢাকার পাশাপাশি মহানগরগুলোতে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ একটি শ্রেণির অবদানই আলোচনা এসেছে সর্বাগ্রে। কিন্তু এর বাইরে অগণিত সাধারণ মানুষের ভূমিকাও ছিল অনন্য। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর তৃতীয় দফায় স্বীকৃতি পাওয়া ১০৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনার পর এ তথ্যই পুনরায় উঠে এসেছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক গেজেটের মাধ্যমে এই স্বীকৃতি প্রদান করে। তারা সবাই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসরদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন।
তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বীকৃতি পাওয়া ১০৮ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ৭২ জনই অজোপাড়া গায়ের শিক্ষক। আরও আছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ ৯, চিকিৎসক ৬, সমাজকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মী ৫ জন করে, আইনজীবী ৩, প্রকৌশলী ও সাংবাদিক ২ জন করে এবং সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকারসহ অন্যান্য ৪ জন। স্বীকৃতি পাওয়া অধিকাংশই ঢাকার বাইরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের। এর আগে স্বীকৃতি পাওয়া দুই লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধার তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করেও দেখা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গ্রামের সাধারণ মানুষের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকায় শিক্ষকদের অধিক্য প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষকদের অবদান অনেক। কারণ তাদেরকে স্থানীয়রা মান্য করতেন, গণ্য করতেন। এজন্য তারা পাকিস্তানিদের টার্গেটের ছিলেন। পাকিস্তানিরা বলত, শিক্ষকরাই তরুণদের বিপথগামী করছে।’
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক তথ্য এখনও অজানা। নানা গবেষণায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, শরণার্থী, নির্যাতিত নারী, বধ্যভূমিসহ নানা বিষয়ে নতুন তথ্য উপাত্ত উঠে আসছে, যার আলোকে গবেষণার দুয়ার আরও উন্মুক্ত হচ্ছে। দেশের শেকড় না জানলে জাতির ভিত্তি তৈরি হয় না, মজবুত হয় না। এজন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণাকে গুরুত্ব দিতে হবে। যার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও জরুরি।’
২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা প্রণয়নে প্রথম কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৯১ জন এবং দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের ২২ মে ১৪৩ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর দেড় বছর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সভা না হওয়ায় গত ১৪ ডিসেম্বর ‘দিবস এলেই টনক নড়ে মন্ত্রণালয়ের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার ধারাবাহিকতা এবার তৃতীয় দফায় ১০৮ জনকে (একজনের নাম দুইবার) শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্বীকৃতি দেওয়া হলো। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত স্বীকৃতি পেলেন ৪৪২ জন। এর মধ্যে শিক্ষক ১৪৩। এর পরে আছেন চিকিৎসক ৯৯ জন।
জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, যে তালিকা পাওয়া গেছে সেটাই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত কমিটি আরও নাম প্রস্তাব করলে সে বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে কি–না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, তালিকা প্রকাশ শেষ হোক। কমিটির যদি কোনো সুপারিশ থাকে তাহলে সেটা পর্যালোচনা করা হবে।
স্বীকৃতি পাওয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীরা হলেন- কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর পাড়ের আইনজীবী অনীল মোহন সাহা, চিওড়ার সরকারি কর্মকর্তা কাজী আজিজুল ইসলাম, কাপ্তানবাজারে রাজনীতিক কাজী মো. সাদেক, কান্দঘরের শিক্ষক আবদুল মালেক, বাগিচাগওয়ের শিক্ষক অসীম শান্তি রায়, মনোহরগঞ্জের প্রধান শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ মোস্তাক হাসান আহমেদ, রংপুরের গোমস্তাপাড়ার সংস্কৃতিবিদ অশ্বিনি ঘোষ, বেহবতপুরের রেলওয়ে কর্মকর্তা এমএ আজিজ সরকার, নুরপুরের সাংবাদিক ইসহাক চৌধুরী, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের চিকিৎসক ডা. অশোক চন্দ্র রায়, দক্ষিণষ বেজুড়ার শিক্ষক অবিনাশ কুমার নাগ, কুষ্টিয়ার চৌগাছার শিক্ষক আবুল হাশেম সরকার, বাড়াদি গ্রামের অধ্যাপক দুর্গাদাস সাহা, দৌলতপুরের শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক, নীলফামারীর রাজনীতিবিদ আমিনুল হক, বাশবাড়ির রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ সহিদ, মহিষকুণ্ডির শিক্ষক আব্দুল কাদের, নওগাঁ জেলা স্কুলের শিক্ষক অহীভূষণ সাহা, আতাবিকূলার চিকিৎসক ডা.প্রমথ নাথ পাল, বলিহারের সঙ্গীত শিক্ষক মানিক কিশোর নান্যসী, গয়েশপুরের আইনজীবী আবু ফারুক চৌধুরী, শিক্ষক মখলেছার রহমান চোধুরী, নাট্যকার শামসুল হক চৌধুরী, ডাসনগরের সমাজসেবী সুব্রত আলী মণ্ডল, গোরাইয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সোলায়মান আলী মোল্লা, বান্দাইখাড়ার শিক্ষক রাধা গোবিন্দ সরকার, বেনীদুয়ারের শিক্ষাবিদ ফাদার লুকাশ মারাণ্ডী, চকজালের শিক্ষক জিতেন্দ্র নাথ সরকার, বদলগাছির শিক্ষক দেবেন্দ্র পণ্ডিত, ছোটচাদপুরের শিক্ষক কাজী আ. জব্বার, ডুরাইয়ের চিকিৎসক ডা.আহাদ আলী সরদার, আতাইকূলার সঙ্গীতশিল্পী উত্তম কুমার পাল, ফার্সিপাড়ার শিক্ষক ওসমান গণি মণ্ডল, চকরামপুরের শিক্ষক ওসমান আলী মোল্লা, শেরপুরের আন্ধারিয়া বানিয়াপাড়ার সমাজসেবক আইজ উদ্দিন মোল্লা, সিরাজগঞ্জের শিক্ষক আবদুস সামাদ, শাহজাদপুরের শিক্ষক হিতেন্দ্রনাথ চন্দ, বরগুনার সদরের রাজনীতিবিদ সিদ্দিকুর রহমান, পাতাকাটা ইউনিয়নের রাজনীতিক আব্দুর রশিদ মাজেদ, লেমুয়ার প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কনক, মানিকগঞ্জের কেওয়ারজানির শিক্ষক আতিয়ার রহমান, গঙ্গারধারপট্টির শিক্ষক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, লালমনিরহাটের চাপারতলের শিক্ষক আমজাদ হোসেন, দিনাজপুরে মতিহারার শিক্ষক আবুল কাসেম সর্দার, ঈদগাওয়ের অধ্যাপক ওয়াহিদুর রহমান চৌধুরী, গোপালগঞ্জের হরিদাসপুরের সাংবাদিক আফসার মোল্লা, সদরের শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ তাহাজ্জেদ হোসেন, ঠাকুরগাওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর বড়বাড়ীর আকবর আলী, রাণীশংকৈলের শিক্ষক নফিজ উদ্দিন আহমেদ সরকার, পীরগঞ্জের ভেমটিয়ার শিক্ষক মফিজ উদ্দিন, সদরের শিক্ষক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ময়মনসিংহের রাঙামাটিয়ার রাজনীতিবিদ ফহিম উদ্দিন সরকার,গৌরীপুরের শিক্ষক মধুসূদন ধর, ভবানীপুরের শিক্ষক ইসমাইল হোসেন মাস্টার ও মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন,নান্দাইলের রাজনীতিবিদ শাহেনওয়াজ ভুইয়া, মুশুলীর শিক্ষক সতীশ চন্দ্র দেব, খামারগাওয়ের শিক্ষক হীরেন্দ্র চন্দ্র মজুমদার, বড় তারাকান্দির শিক্ষক ধীরেন্দ্র চন্দ্র সরকার, খামারগাওয়ের চিকিৎসক ডা. খগেন্দ চন্দ্র মজুমদার, নেত্রকোনার রামকান্দার শিক্ষক একেএম রফিকুল ইসলাম, পুখুরিয়ার শিক্ষক প্রদীপ কুমার দাস, নরেন্দ্রনগরের শিক্ষক বদিউজ্জামান মুক্তা, খুলনার আরাজী ডুমুরিয়ার প্রধান শিক্ষক এসএম জোবায়েদ আলী, কিশোরগঞ্জের ঘাটাইলের শিক্ষক এবি মহিউদ্দিন আহমেদ ওরফে গোলাম মাওলা,তাড়াইলের প্রধান শিক্ষক শামসুল হক চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জের আইনজীবী কেদার রায় চোধুরী, গাজীপুরের কাপাসিয়ার শিক্ষক খন্দকার মোহাম্মদ এলাহী বক্স,পঞ্চগড়ের রাধানগরের শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম, গাইবান্ধার সগুনার শিক্ষক গোলজার রহমান,পলাশবাড়ীর সমাজেসবী ও সংগঠক হারেজ আলী মণ্ডল, বরিশালের বাকেরগঞ্জের শিক্ষক গণপতি চ্যাটার্জী, উজিরপুরের প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, সদরের কালীশচন্দ্র রোডের নাট্য অভিনেতা মুজিবুর রহমান কাঞ্চন, পাবনার বনগ্রামের প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার, বাগেরহাটের আন্ধারমানিকের প্রভাষক চিত্তরঞ্জন রায়, সিরাজগঞ্জের গাজাদহের শিক্ষক তোজাম্মেল হোসেন, সদরের সংগঠক বাহাজ উদ্দিন আকন্দ, ঢাকার ধামরাইয়ের শিক্ষক দীনেশচন্দ্র রায় মৌলিক, যশোরের বালিয়ঘাটের প্রধান শিক্ষক নবীনচন্দ্র ঘোষ, চট্টগ্রামের রাউজানের প্রধান শি্ষখ বাগ্মীশ্বর বড়ুয়া, রাজনীতিবিদ বাবু মতিলাল চৌধুরী, মীরসরাইয়ের শিক্ষক মৌলভী জাফর আহম্মদ ভুইয়া, সীতাকণ্ডের অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, দিনাজপুরে চিরিরবন্দরের রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসক ডা.বদিউজ্জামান,বীরগঞ্জের সংস্কৃতিকর্মী মোহাম্মদ ইছব আলি দেওয়ান,সঙ্গীতশিল্পী সতীশ চন্দ্র পাল, ফেনীর হরিপুরের শিক্ষক বদরুল হক চোধুরী, ভোলা সদরের সংস্কৃতিকর্মী ও ব্যাংকার মোহাম্মদ হানিফ, টাঙাইলের বাসাইলের অধ্যাপক মোহাম্মদ হযরত আলী,চাপাইনবাবগঞ্জের মণ্ডলপাড়ার অধ্যাপক মো. মমিনুল হক, চাদপুরের দাশাদীর প্রধান শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সিলেটের চুকেরবাজারের শিক্ষক অলিউর রহমান, জালালাবাদের হোমিও চিকিৎসক ডা. মওলানা অলিউর রহমান, ছাতকের প্রধান শিক্ষক রিয়াছাত আলী, কক্সবাজারের পোকখালীর রাজনীতিবিদ ও প্রধান শিক্ষক মোহম্মদ ইলিয়াস, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারের প্রধান শিক্ষক মতিলাল ঘোষ, নরসিংদীর মনোহরদীর শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী মোল্লা, পলাশের প্রভাষক সরোজকুমার নাথ অধিকারী, ঘোড়াদিয়া পূর্বপাড়ার শিক্ষক হরলাল সাহা, মিরগড়ের শিক্ষক সামসুল হুদা, মৌলভীবাজাররে কমলগঞ্জের শিক্ষক রমেশ চন্দ্র দাস, সিলেটের ছাতকের প্রধান শিক্ষক রিয়াছত আলী, পিরাজপুরের শিয়ালকাঠীর রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী ললিত কুমার বল, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের শিক্ষক শেখ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা, দিনাজপুরের সঙ্গীতশিল্পী সতীশ চন্দ্র পাল, নাটোরের বড়ইগ্রামের আইনজীবী সুশীল চন্দ্র পাল, লক্ষীপুরের শিক্ষক সেকেন্দার আলী ভুঁইয়া।