পিপলস্ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন নিজে ও তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এরমধ্যে তার দুই মেয়ের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন ৬৪ কোটি টাকা। খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ। তারা দুই দশক ধরে কানাডায় অবস্থান করছেন। পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৮ জুলাই তারা দেশে আসেন।
আজ বুধবার (২৪ আগস্ট) দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল। এর আগেই বুধবার (২৪ আগস্ট) ভোরে দু’জনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ব্যাপারে এসব তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, পিপলস্ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত থাকাকালে নিজে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তীতে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
চলতি বছরের ৭ই মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ঋণখেলাপিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে হাইকোর্ট। পরবর্তীতে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৯শে এপ্রিল আদালত তাদের গ্রেপ্তার করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব জানতে পারে যে, প্রতিষ্ঠানের ২ জন ঋণখেলাপি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। র্যাব এ ঋণখেলাপিদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার দুজন তাদের বাবা সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নেয়। শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তারা গত ২৮শে জুলাই কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং আজ পুনরায় গোপনে কানাডার উদ্দেশে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছিল।
১৯৯৭ সালের ২৪শে নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস্ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে পিপলস্ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি এর সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসময় আদালত পি কে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করে।
র্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তি/শ্রেণীর আমানতকারী রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় এক হাজার ৮শত কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এই টাকার পুরোটাই পিপলস্ ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে। এই অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
খুলনা গেজেট/এমএনএস