লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই, ৫০ বছর বয়সে এসে আবারও তা প্রমাণ করলেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি সীমান্তবর্তী তাইন্দং ইউনিয়নের আছালং ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা এবং সাবেক চেয়ারম্যান ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রকাশিত ফলে জানা যায় যে মো. সিরাজুল খাগড়াছড়ি ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে আলিম পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি জিপিএ-২.১৪ পান।
শুধু তিনিই নন, চলতি বছর তার বড় মেয়ের ঘরের বড় নাতি মো. নাজমুল হাসান জিপিএ-৪.৬৭ এবং ছোট মেয়ে মাহমুদা সিরাজ জিপিএ-৪.১৭ পেয়ে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। একমাত্র ছেলে হাফেজ নেছারুদ্দীন আহমদ জিপিএ-৪.০০ পেয়ে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেছেন। এ ছাড়া বড় মেয়ের ঘরের বড় নাতনি জিপিএ-৩.৭৬ পেয়ে তবলছড়ি ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেছেন।
রোববার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর বাবা-ছেলে-মেয়ের পাশের খবরে আনন্দের বন্যা বইছে সীমান্তঘেঁষা আছালং ইসলামপুর এলাকার মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বাড়িতে। এ সময় প্রতিবেশী ও স্বজনরা অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন তাদের বাড়িতে। স্বজনদের কেউ কেউ নিয়ে আসেন ফুল ও মিষ্টি। তার বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশীরা। তাদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা।
ছোট মেয়ে মাহমুদা সিরাজ বাবার এ সাফল্যে উচ্ছসিত। তিনি বলেন, ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় যে সাফল্য এনে দিতে পারে, তার অনন্য দৃষ্টান্ত আমার বাবা। আমাদের ভাই-বোনের ফলাফলের চেয়েও বাবার ফলাফলে আমরা সবাই গর্বিত।
ছয় মেয়ে ও এক পুত্রসন্তানের জনক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৮৭ সালে তাইন্দং মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেন। এরপর বৃদ্ধ মা-বাবার দেখভাল ও পারিবারিক প্রয়োজনে প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও লেখাপড়া এগিয়ে নিতে পারেননি। কিন্তু সব সময়ই লেখাপড়ার প্রতি তাগিদ অনুভব করতেন।
দীর্ঘ বিরতির পর আবার কেন লেখাপড়ায়, জানতে চাইলে মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। ফলাফল ঘোষণার পর ছেলে-মেয়ে আর নাতির সঙ্গে নিজের কৃতিত্বের খবর পাওয়ার সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত, এটা কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়।
লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে সিরাজুল বলেন, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সবাই চাইছে আমি লেখাপড়া অব্যাহত রাখি