করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ একের পর এক রেকর্ড গড়ছে। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক শুন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪ লাখ ৯ হাজার ৮৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ১৫ পয়সা হিসাবে)।
এর মধ্য দিয়ে রিজার্ভ অতীতের চেয়ে বেড়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এ রিজার্ভ দিয়ে ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব (প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে)।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দিনের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের এসডিআর বরাদ্দ (ঋণ-সহায়তা) যোগ হওয়ায় দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক শুন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০৪ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, এর আগে গত ২৯ জুন রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৮২ বিলিয়ন ডলার। যা ওই সময় অতীতের রেকর্ড অতিক্রম করেছিল। এছাড়া গত ৩ মে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। ওইদিন রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ৪৪.০২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০২ কোটি ডলার ছাড়ায়। এর আগে, ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ বিলিয়ন এবং ২৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। এই অক্টোবরেই বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথম ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরপর ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
রিজার্ভ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নামলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে— এমন আশঙ্কায় ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাকি রাখতে বাধ্য হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ইরান ও মালদ্বীপ— এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করে। আকুর বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ কিছুটা কমে যায়।
ব্যাংকাররা জানান, রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্সের উপর ভর করে রিজার্ভ অতীতের চেয়ে বেড়ে রেকর্ড গড়েছে। রেমিট্যান্সের উপর প্রনোদনা বাড়ানোর মাধ্যমে ভবিষ্যতে রিজার্ভ আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার (১.৮৭ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স এসেছে। আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আহরনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।