খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

৩ দিনেও মেরামত হয়নি পাইকগাছার বাঁধ, পানিবন্দি ১৫ হাজার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হওয়ায় দুর্বিষহ দিন কাটছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। ৩ দিন ধরে শত চেষ্টা করেও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত সম্পন্ন করতে পারেনি গ্রামবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাকা উঁচু সড়কে, আবার কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে। কেউ কেউ রয়ে গেছেন পানিবন্দি ঘরেই। রান্না করতে পারছে না বেশিরভাগ পরিবার। তলিয়ে গেছে অসংখ্য চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমি।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে কালীনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের স্থানে গিয়ে দেখা যায়, রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন হাজারও মানুষ। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে নারীদেরও কাজ করতে দেখা যায়। অনেক নারী বাড়ি থেকে কলসিতে করে পানি এনে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষের তেষ্টা মিটাচ্ছেন। মাইকে, হ্যান্ডমাইকে দেয়া হচ্ছে নির্দেশনা। এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে কাজে অংশ নিচ্ছেন। খুলনা নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ও অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে সেখানে হাজির হচ্ছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত ৩ দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ আটকানোর চেষ্টা চলছে। তবে এখনও সফলতা আসেনি। ভাটার সময় করা কাজ জোয়ারের পানিতে বারবার ভেঙে যাচ্ছে।

দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল জানান, কালীনগর, দারুল মল্লিক, হরিণখোলা, সৈয়দখালি, সেনেরবেড়, গোপীপাগলা, খেজুরতলা, তেলিখালী, হাটবাড়ী, ফুলবাড়ী, বিগরদানা, দুর্গাপুর ও নোয়াই গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। প্লাবিত হয়ে ফসল ও কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে চিংড়িঘের ও পুকুরের মাছ। হাজারও মানুষ রিং বাঁধ তৈরির কাজ করছেন। কিন্তু এখনও কোনো কুলকিনার করতে পারিনি।

তিনি বলেন, এই এলাকায় কোনো সাইক্লোন শেল্টার নেই। আশপাশের উঁচু সড়ক ও স্কুলগুলোতে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আমরা বারবার এভাবে ডুবে যেতে চাই না। আমাদের একটাই দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ জানান, ৯৫০ হেক্টর আমন ধান ক্ষেত, ২২৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা ও ২৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, প্রায় ৪০০টির মতো চিংড়ি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট পানি বেড়েছে। সে কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। ২টি এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কেটে রিং বাঁধ দেয়া হচ্ছে। শত শত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। রোববার জিও টিউব দিয়ে বাঁধ মেরামত করা হবে।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনিন জানান, প্রায় ১ হাজার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২ টন চাল, নগদ ৫৫ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডারের কালীনগর গ্রামের রেখামারী খালের গোড়ার দিকের এলাকায় ভদ্রা নদীর তীরের প্রায় ২০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের ভাঙা অংশ বড় হয়ে গেছে।

খুলনা গেজেট/হিমালয়




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!