বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। আজ শনিবার দুপুরে শোভাযাত্রা শুরুর আগে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে দলটি।
সমাবেশে বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, ‘১৯৭১ সালে বিজয় হয়েছিল গণতন্ত্রের। সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে আজকে বিজয় দিবসকে আওয়ামী লীগ সরকার পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে। আমরা চেয়েছিলাম পাকিস্তানের ২২ পরিবার, যারা সব বৈদেশিক মুদ্রা কুক্ষিগত করে পাকিস্তানকে একটি লুটপাটের দেশে পরিণত করেছিল তাদেরকে হটিয়ে এমন একটি স্বাধীন দেশ হবে যেখানে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি হবে। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার ২২ পরিবারের পরিবর্তে ২২০টি ধনী পরিবার দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি সরকারের যদি সৎ সাহস থাকে, সরকার যদি মনে করে তারা উন্নয়ন করে বাংলাদেশকে জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছে তাহলে ক্ষমতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে আসুক। জনগণ তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিক। দেখা যাবে, কে জেতে। যেভাবে টাকা পয়সা আদান-প্রদান, সিট ভাগাভাগি করে তারা একটি ভুয়া সংসদ নির্বাচন করার পথে যাচ্ছে। এটা কোনো নির্বাচন হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের নির্বাচন হয় না। এমনকি বাংলাদেশের মতো প্রকাশ্যে বাহাদুরি করে পৃথিবীর যেসব দেশ গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না তারাও ভোটচুরি করে না।’
‘আজকের যেটা সত্য সেটা জনগণের সামনে আমরা তুলে ধরছি। জনগণ নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব ক্ষমতা কাকে দেবে। বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। বিএনপি রাজনীতি করে জনগণের কল্যাণের জন্য, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য,’ বলেন তিনি।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পর বলতে হচ্ছে আমরা আবার গণতন্ত্র হারিয়েছি। গণতন্ত্রের নামে স্বৈরশাসন চলছে। জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
‘বিএনপির যারা সংগ্রামী নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা— মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আমানুল্লাহ আমানসহ অসংখ্য নেতা কারারুদ্ধ। প্রতিদিন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, দন্ডিত করা হচ্ছে। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব হচ্ছে নির্বাচন নামের একটা খেলা খেলার জন্য।’
‘বাংলাদেশের কোনো বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। যারা এই নির্বাচনের খেলায় যোগ দিয়েছে তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের প্রধানকে পা ছুয়ে সালাম করে, তার দোয়া নিয়ে নির্বাচনে নামছে। সবাই জানে, পত্র পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে কারা, কোন দল কয়টা আসন পাবে, কোন নেতা কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করবে। এটা কোনো নির্বাচন, ভাবতে পারেন? নির্বাচন হবে প্রতিযোগিদের মধ্যে। এখন সেই ব্যাপার নাই। কারণ জনগণ এই নির্বাচন চায় না। এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যাবে না। ভোটার আনার জন্য এখন নিজের দলের লোকজনকেই ডামি প্রার্থী বানাচ্ছে। লোকে বলে, একবার নির্বাচন হলো প্রার্থী ছিল না, আরেকবার নির্বাচন হলো রাতের বেলায় ভোট হয়ে গেল আর এবারের নির্বাচন হলো ডামি নির্বাচন,’ বলেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘ডামি নির্বাচনের জন্য সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। ঘোষণা করে দিলেই হয় কোন আসনে কে নির্বাচিত হলো। এই খেলার কী দরকার? এত লোকের কষ্টের কী দরকার? যে দেশের মানুষ এত কষ্টে আছে, সাধারণ মানুষ দুই বেলা খেতে পারে না সেখানে ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই নির্বাচন করার কী অর্থ আছে? ঘোষণা করে দিলেই হয় অমুক এমপি, তমুক মন্ত্রী।’
‘এই রসিকতার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করি নাই। আমরা চাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জনগণ যাকে পছন্দ করবে তারা নির্বাচিত হবে। আমরা সেই নির্বাচন আদায়ের জন্য লড়াই করছি। এই লড়াইয়ে আমাদের অনেক সাথী জীবন দিয়েছে, অনেকে কষ্ট করেছে এখনো করছে আমরা তাদের রক্তের সঙ্গে, কষ্টের সঙ্গে বেঈমানি করব না। এই লড়াই চলবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন না জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়,’ বলেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ টিএ