খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  রাঙামাটির পর্যটনকেন্দ্র সাজেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা
  কক্সবাজারে বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলা
  এস কে সুর চৌধুরীর স্ত্রী ও মেয়ের জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ
  রাজধানীতে ছাত্রী হোস্টেল থেকে ঢাবি ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  চ্যানেল ওয়ান সম্প্রচারে বাধা নেই : আপিল বিভাগ

১৮ মাস ধরে অরক্ষিত কুয়েট

একরামুল হোসেন লিপু

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষ। ওই দিনের সংঘর্ষের ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে খুলনা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সংঘর্ষে কুয়েটের দেড় শতাধিক ছাত্র আহত হয়।

হামলাকারীদের হাত থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে এগিয়ে এসে নিজেই হামলার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস। এছাড়াও ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন।

জানা যায়, কুয়েটের দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়ক বরাবর প্রায় ৯০০ মিটার সীমানা ১৮ মাসের অধিক সময় ধরে অরক্ষিত। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সিআরডিপি প্রজেক্ট-২ ‘র আওতায় কুয়েট সংযোগ সড়কের ফুলবাড়িগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল পর্যন্ত ১ হাজার ১৮৫ মিটার সড়কের আধুনিকায়নের কাজ ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের প্রায় ৯০০ মিটার সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে। এরপর থেকে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম এ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টি অরক্ষিত ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করে এস এম বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজে কাজ না করে সাব কন্টাক্টর নিয়োগ দেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত সাব কন্ট্রাক্টর গত ১২ মাসেও সীমানা প্রাচীর পুঃনির্মাণের কাজটি শেষ করতে পারেনি। ১২ মাসে কাজের অগ্রগতি ছিল খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি দু’ গ্রুপে সংঘর্ষ শুরুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সকল গেট বন্ধ করে দিলেও দক্ষিণ পাশের সীমানা প্রাচীর অরক্ষিত থাকায় বহিরাগতরা খুব সহজেই সীমানা প্রাচীর অতিক্রম করে ভিতরে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তারা এ সময় শিক্ষার্থীদের উপর ব্যাপক ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে যা ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে শিক্ষার্থীদের আয়োজনে “রক্তাক্ত কুয়েট” শিরোনাম ছবির প্রদর্শনীতে স্থান পায়।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন বহিরাগতরা সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করে খান জাহান আবাসিক হলের পার্শ্ববর্তী অরক্ষিত সীমানা দিয়ে। এ সময় ইট পাটকেল নিক্ষেপে নবনির্মিত খান জাহান হলের দক্ষিণ পাশের গ্লাস ভাঙচুর হয়। শিক্ষার্থীরা শুরু থেকে এ ঘটনার জন্য ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করে আসছে।

বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন প্রামানিক খুলনা গেজেটকে বলেন, “প্রায় ১৮ মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের সীমানা প্রাচীর অরক্ষিত। কুয়েট সংযোগ সড়কের আধুনিকায়নের ড্রেন নির্মাণের কাজ করার সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে। আমরা নিরাপত্তা বিভাগ থেকে তৎকালীন ভিসি বরাবর সীমানা প্রাচীর দ্রুত পুনঃনির্মাণের জন্য লিখিত আবেদন করি। । এরপর গত বছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভাঙ্গা অংশ থেকে কুয়েট পকেট গেট পর্যন্ত সীমানাপ্রাচীর পুনঃনির্মাণ করলেও ডিজাইনের গ্রিল স্থাপন না করায় সে গ্যাপগুলো টিন দিয়ে বন্ধ করা ছিল। কিন্তু ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বহিরাগতরা টিনের বেড়া ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ,বি,এম মামুনুর রশিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা দ্রুত চেষ্টা করেছি দক্ষিণ পাশের অরক্ষিত সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের কাজ শেষ করতে। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে সেই থেকে দ্রুত সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের তাগিদ দিয়ে আসছি। তাদের গাফিলতির কারণে কাজ শেষ হয়নি। তাছাড়া সীমানা প্রাচীরের ডিজাইন নিয়েও কিছুটা জটিলতা ছিল। প্রথমে আমরা সীমানা প্রাচীরের মাঝে গ্রিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু পরবর্তীতে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় সীমানা প্রাচীরের টিনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা এগুলো আবার টিন দিয়ে আটকিয় দেয়। সংঘর্ষের ঘটনার পর সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একাধিক সাব কন্টাক্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। আশা করা যায় আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যে সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের কাজ শেষ হবে”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোঃ জুলফিকার হোসেন বলেন, “কুয়েট সংযোগ সড়কের আধুনিকায়নের ড্রেনের কাজে বিলম্বের কারণে আমাদের সীমানা প্রাচীন পুনঃনির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্থ হয়েছে।গত বছর জানুয়ারিতে সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা গত এক বছরে কাজ শেষ করতে পারেনি। তাদের গাফিলতি ছিল। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য আমরা তাদেরকে বারবার তাগিদ দিয়েছি। ডিজাইনে আগে গ্রিল দেওয়া ছিল। এখন সলিড করা হচ্ছে। এখন দ্রুতগতিতে কাজ চলছে করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণ কাজ শেষ হবে ইনশাআল্লাহ”।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!