খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  জুন মাস থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করবে নেপাল
  সাভারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ ৭

১৭ দিনেও প্রসূতির যৌনাঙ্গ কেটে সন্তান প্রসবের চেষ্টা’র ঘটনা নিষ্পত্তি হয়নি

বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি

বাগেরহাটের চিতলমারীতে প্রসূতি মায়ের যৌনাঙ্গ কেটে সন্তান প্রসবের ঘটনার বিচার চেয়ে অভিযোগ করার ১৭ দিন পার হলেও ঘটনাটির কোন সুরহা হয়নি। এ ঘটনায় পুনরায় উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের শাহানা বেগম (৪৫) নামের এক নারী বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক বরাবরে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাসুদ আল-ইমরান ও অফিস সহকারি মো. আবু হানিফের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে ওই নারী তাঁর মেয়ে আখি আক্তরের (২২) ভুল চিকিৎসা করা স্বাস্থ্যকর্মী মঞ্জুশ্রী সিকদারের বিচার ও কর্মকর্তা এবং অফিস সহকারির হয়রানি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।

অভিযোগ পত্রে জানা গেছে, শাহানা বেগম (৪৫) বাস করেন হিজলা ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে। স্বামী নিরুদ্দেশের পর তিনি বহু কষ্টে ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মেয়ে আখি আক্তার (২২) কে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের পরিবার তাঁর দেখাশুনা করতে হয়। তার মেয়ের তাফসিয়া নামে সাড়ে চার বছর বয়সের একটি মেয়ে আছে। আখি আবারও সন্তান সম্ভবা হলে গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় হিজলা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়াডের্র এফডব্লিউএ মঞ্জুশ্রী শিকদার ও আয়া মোমেনা শাহানার বাড়িতে বসে আখির প্রসবের ব্যবস্থা করেন।

তখন তিনি তাদের বলেন, ‘কোন প্রকার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। সমাস্যা মনে হলে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিতে হবে।’ কিন্তু তারা তা না করে সারা রাত ধরে তাঁর মেয়ের প্রসব ঘটাতে তার শরীরের উপর নানা ধরণের চাপ প্রয়োগ ও টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। তাদের টানা হেঁচড়ায় আমার মেয়ের গোপনাঙ্গ ছিঁড়ে যায় এবং তারা কেচি দিয়ে যৌনাঙ্গের দুই পাশ কেটে বাচ্চা বের করার চেষ্টা করে। রবিবার ভোরের দিকে মেয়ের আত্মচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। এ সময় প্রতিবেশীরা এফডব্লিউএ মঞ্জুশ্রী শিকদার ও আয়া মোমেনার ভুল চিকিৎসায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারা তার মেয়েকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় চিতলমারী সদরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আখির গোপনাঙ্গে ২০ টি সেলাই দেন এবং সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করান।

বিষয়টির সুবিচার ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য তিনি ৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে ওই অফিসের অফিস সহকারি মো. আবু হানিফ অভিযোগ জমা না রেখে তাঁর সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। পরে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মাসুদ আল-ইমরানকে বিষয়টি জানালে তিনি বলার পর আবু হানিফ অভিযোগপত্রটি জমা রাখেন এবং তাদের সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) অফিসে আসতে বলেন। তারা সোমবার সকালে ১০ টায় চিতলমারী বাজারে পৌছালে আবু হানিফ তাদের ফোনে বলেন বধুবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অফিসে আসেন। তারা বুধবার ১১ টার দিকে আবার অফিসের উদ্দেশ্যে চিতলমারী গেলে আবু হানিফ আবারও ফোনে বলেন আপনারা আগামী সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ার) অফিসে আসেন। সেই সাথে তিনি তাদের নিয়ে নানা রকম ঠাট্টা ও উপহাস করেন। তাই তিনি মেয়ে আখি আক্তরের ভুল চিকিৎসা করা স্বাস্থ্য কর্মি (এফডব্লিউএ) মঞ্জুশ্রী সিকদারের বিচার ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মাসুদ আল-ইমরান এবং অফিস সহকারি মো. আবু হানিফের হয়রানি বন্ধের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে শাহানা বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর থেকে মঞ্জুশ্রী ও মোমেনা আমাদের কোন খোঁজ নেয়নি। মঞ্জুশ্রী ও মোমেনার বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ জমা দিতে গেলে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে অফিস সহকারি মো. আবু হানিফ অভিযোগ জমা না নিয়ে আমার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। পরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তার কথায় তাচ্ছিল্যের সাথে অভিযোগপত্রটি জমা রাখেন। এখন দফায় দফায় তারিখ পরিবর্তন করে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি এ সব ঘটনার বিচারসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

এ ব্যাপারে এফডব্লিউএ মঞ্জুশ্রী শিকদার বলেন, প্রসব করানোর সার্টিফিকেট আমার আছে। যৌনাঙ্গ কাটাকাটি করে আমি কোন ভুল করিনি।

চিতলমারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে অফিস সহকারি মো. আবু হানিফ বলেন, বিষয়টি আমি মিমাংশা করা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। তাদের কোন হয়রানি করা হয়নি। শুধু তারিখ গুলো পাল্টানো হয়েছে।

চিতলমারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মাসুদ আল-ইমরান বলেন, এ ব্যাপারে ফোনে কিছু বলতে পারব না। বেশী কিছু জানতে হলে সাক্ষাৎ করে কথা বলেন।

এ ব্যাপারে জানতে বাগেরহাট পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক মো. শামসুদ্দীন মোল্লাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!