জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪, ১৮ ও ২৪এর মতো কোন নির্বাচন আর দেখতে চায়না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সে নির্বাচন হতে হবে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল রাষ্ট্রীয় অর্গানগুলো সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ১৫ বছরের জঞ্জাল পরিষ্কার করেই হতে হবে আগামী নির্বাচন। সেইসাথে যারা বিগত দেড় দশকে লুটপাট, খুন, দুর্নীতি, অনিয়ম করেছে তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে খুলনা মহানগর সংলগ্ন হরিণটানা থানাধীন আরাফাত নগর ইউনিট জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
হরিণটানা থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আব্দুল গফুরের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি এডভোকেট ব ম মনিরুল ইসলাম এবং আমির হোসেনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজি ও ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মোক্তার হোসাইন।
অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জাহিদুর রহমান নাঈম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আমীর মশিউর রহমান রমজান, শ্রমিক নেতা কাজী মাহফুজুর রহমান, জামায়াত নেতা সাখাওয়াত হোসেন লিখন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মতিউর রহমান, ডা. ফজলুর রহমান, ডা. মো. ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ শহিদুল আলম, মাওলানা আফজাল হোসাইন, রেদওয়ান উল্লাহ ইব্রাহিম প্রমুখ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, আগামী নির্বাচন হতে হবে ৫ আগষ্টের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি জাতীয় ঐক্যের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের উদ্বৃত্তি তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অনেক শাসন দেখেছি। শুধু জামায়াতে ইসলামীকে দেখতে। তাই এবারের শ্লোগান হবে ‘সব দল দেখা শেষ, জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশ’। তিনি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ গঠনে সকলকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানান।
সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, কথিত মানবতাবিরোধী সাজানো অপরাধের নামে জামায়াতের যে সব নেতৃবৃন্দ হত্যার শিকার হয়েছে আমরা তাদের কাছে ঋণী। তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আজকে যেই বাংলাদেশ হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে শহিদরাও সেই বাংলাদেশ চেয়েছিল। সুতরাং সেই বিচার হতেই হবে। জুডিশিয়াল ক্যু করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই জুডিশিয়াল ক্যু’র সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ কখনো মেনে নেবে না। আমরা সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতেই চলতে চাই। যারা কিছু কিছু সুবিধা নিচ্ছেন, তারা আমাদের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন চাই, তা হবে সুষ্ঠুভাবে, সঠিকভাবে। আমরা নিয়ম তান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে চাই।’ বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার জনগণের সকল অধিকার; বাক স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মিডিয়ার স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ২০১৪, ১৮ এবং ২৪ সালের ভোট দিতে পারেনি। এদেশের মানুষ আর এরকম নির্বাচন হতে দিবে না। দেশের সর্বত্র এবং প্রশাসনের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদেরকে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “শেখ হাসিনার হিংসাত্বক রাজনীতির প্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তান্ডব, মানুষ হত্যা করে লাশের উপর নর্তন-কুর্দনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিলো। পরবর্তীতে ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা লাভ এবং কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদি শাসনের পর ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ পথ খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য এখনো অনেক দূরে। দেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য।” জাতীয় ঐক্য গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও ইউনিট নেতৃবৃন্দকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/ টিএ