খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত
  জুলাই গণহত্যা : ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ
বন্যায় সিলেটে ফ্লাইট বন্ধ, বিদ্যুৎ স্টেশন ঝুঁকিতে

১২ নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে, ভয়াবহ হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি

গেজেট ডেস্ক

টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে হু হু করে পানি বাড়ছে। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন এলাকার টিনের চালের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

বন্যার পানি ইতোমধ্যেই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশ ও বিদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ হতে যাচ্ছে।

শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার হাফিজ আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, বন্যার পানি ইতোমধ্যেই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিদিনের মতোই আমাদের ফ্লাইটগুলো বিমানবন্দরে অবতরণ ও বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছে। কিন্তু রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে আসায় এখন থেকে আর কোনো ফ্লাইটের অবতরণ কিংবা উড্ডয়ন সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে। অফিসিয়ালি ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা চলে আসবে।

এ অবস্থায় সিলেটের আট উপজেলায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর সাত ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা। দুপুর থেকে তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করে। সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ছাতক, দিরাই, দোয়ারাবাজারে সেনা সদস্যরা পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে সিলেট বিদ্যুৎ স্টেশন।

সিলেটের জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, লামাকাজী, বিশ্বনাথ এবং ওসমানীনগরসহ সবকটি এলাকায় পানিতে টইটুম্বুর করছে। অনেক জায়গায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার বেশ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

সিলেট উপশহর

সিলেট নগরের উপশহরসহ কমপক্ষে ৫০টি এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। সিলেট শহরের নদী তীরবর্তী শতভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের ৩১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই হচ্ছে না।

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে মধ‍্যরাত থেকে টানা বৃষ্টির কারণে শহরের কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তবে এতে বন‍্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকেই শহরের কয়েকটি এলাকা বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরে বসবাসকারী মানুষ। বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে শহরের কুসুমবাগ, পশ্চিমবাজার, পুরাতন হাসপাতাল রোড, আরামবাগ, দ্বারকসহ বিভিন্ন এলাকা।

কোম্পানীগঞ্জ

কোম্পানীগঞ্জ সড়কে কয়েক হাজার বন্যার্ত মানুষজন এসে রাত থেকে অবস্থান নিয়েছেন। একই সঙ্গে সিলেট-তামাবিল সড়কেও এসে আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ।

সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তাঘাট, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম

এদিকে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র। টানা বৃষ্টির সঙ্গে উজানের ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে নিন্মাঞ্চল। ডুবছে একের পর এক ফসলি জমি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদীর তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। ভাঙ্গনে বাড়িঘর হারিয়ে দিনের পর দিন মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব, দেখা দিয়েছে হাহাকার।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে যা বলছে পাউবো

অন্যদিকে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবো পূর্বাভাসে জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উজানে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ফলে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে মেঘনা এবং উত্তরাঞ্চল অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।

আজ শুক্রবার পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বার্তায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের ১২টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হলো- তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার, সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে ১০৮ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১২০ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদী কমলাকান্দা পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদী সারিঘাট পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা নদী দেরাই পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা নদী লরেরগড় পয়েন্টে ১৫৪ সেন্টিমিটার এবং ভুগাই নদী নাকুয়াগাও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মহেশখোলায় ৪০৭ মিলিমিটার, ছাতকে ৩৬৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ৩৭৫ মিলিমিটার, লরেরগড়ে ৩২০ মিলিমিটার, জাফলংয়ে ২৬৮ মিলিমিটার, কাউনিয়ায় ২২৫ মিলিমিটার এবং দূর্গাপুরে ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!